‘ওপেক্সের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার আছে’

আহসান খান চৌধুরী, চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ
প্রথম আলো ফাইল ছবি

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম সফল উদ্যোক্তা আনিসুর রহমান সিনহার প্রতিষ্ঠান ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপের কাঁচপুর শাখার কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে ব্যবসায়ীদের অনেক শিক্ষা নেওয়ার আছে বলে মনে করেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী।

আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘ওপেক্সের ব্যর্থতা থেকে আমাদের অনেক শিক্ষা নেওয়ার আছে। আনিসুর রহমান সিনহা আংকেলকে আমি ৪৫ বছর ধরে চিনি। খুবই ভালো। একই সঙ্গে একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। সামরিক বাহিনীর চাকরি ছেড়ে তিনি ব্যবসা শুরু করেছিলেন। ওপেক্স খুবই ভালো করছিল। খুবই ভালো। আমি মনে করি, পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কোম্পানি হিসেবে ওপেক্সের আত্মপ্রকাশের সুযোগ ছিল।’

ওপেক্স মতো প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হওয়ার জন্য কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠাই মূল কারণ বলে মনে করেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ব্যবসার জন্যই উত্তরাধিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো আপনার প্রতিষ্ঠানের বর্তমান মালিক খুবই ভালো। ভবিষ্যতে যাঁরা আসবেন, তাঁরা কেমন। তাঁদের বিচক্ষণতা কেমন। তাঁরা ব্যবসার প্রতি কতটা মনোযোগী। যদি তাঁরা মনোযোগী না হন, তাহলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে প্রফেশনালাইজ করতে হবে। প্রফেশনাল ম্যানেজমেন্টের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। অনেকটা ইউনিলিভার, নেসলের মতো ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।’
নরসিংদীর পলাশে ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে চরকা টেক্সটাইলে গতকাল শনিবার সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আহসান খান চৌধুরী।

আরও পড়ুন

আশির দশকে যাত্রা শুরু করা ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপে একসময় কাজ করতেন ৪৫ হাজার শ্রমিক। রপ্তানি হতো কয়েক হাজার কোটি টাকার পোশাক। তবে সবই এখন অতীত। কয়েক বছর ধরে রুগ্‌ণ হতে হতে ১৮ অক্টোবর কাঁচপুরের সব কটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (প্রশাসন) বানিজ আলী স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ২০১২ সাল থেকে কাঁচপুরের সব কারখানায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তার পরও ঋণ ও জমিজমা বিক্রির মাধ্যমে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য খরচ দিয়ে কারখানাগুলো চালু রেখেছিলেন। কিন্তু করোনা মহামারিতে ক্রয়াদেশের অভাব দেখা দেয়। তা ছাড়া শ্রমিক-কর্মচারীদের বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি নিম্ন দক্ষতা ও সময়–সময় কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার কারণে কারখানার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। এ অবস্থায় মালিকের আর্থিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটেছে। বর্তমানে কারখানাগুলো আর চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

ঢাকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কাঁচপুরে বড় কারখানা কমপ্লেক্স গড়ে তুলেছিল ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপ কর্তৃপক্ষ। সেখানেই শার্ট, সোয়েটার, ডেনিম, নিট পোশাক ইত্যাদি তৈরি হতো। ৪৩ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই বস্ত্র ও পোশাক উৎপাদনের কমপ্লেক্স এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে; যদিও কমপ্লেক্সটিতে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ১৩ থেকে ১৪ হাজারে নেমে এসেছিল।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘আমি ২১ বছর বয়সে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপে বাবার সঙ্গে যোগ দিয়েছিলাম। ৩০ বছর ধরে আমি ব্যবসা করছি। ইতিমধ্যে আমার দ্বিতীয় প্রজন্ম ব্যবসায় এসেছে। আমার মেয়েরা কাজ করছে। তবে আমি প্রতিনিয়ত স্টাডি করি আমার পরবর্তী প্রজন্ম প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এই বিশাল দায়িত্ব পালন করতে পারবে কি না; যদিও একই সঙ্গে আমরা প্রচুর প্রফেশনালস তৈরি করেছি। আমাদের সব পরিচালকই বেতনভুক্ত। তাঁরা মালিক না হলেও তাঁদের অবদান মালিকদের চেয়ে বেশি। আমরা তাঁদের জন্য মুনাফার ভাগ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি, যাতে তাঁরা ব্যবসাটাকে নিজেদের মনে করতে পারেন।’

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওপেক্স ব্যর্থ হয়েছে। অনেক বলেন, বিনিয়োগ বেশি করে ফেলেছিলেন। আমি সেটা মনে করি না। আনিসুর রহমান সিনহা আংকেল সুন্দরভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু সঠিক উত্তরাধিকার তৈরি করতে পারেননি। অবশ্য তাঁরা যখন ব্যবসা করেছেন, তখন বর্তমানের মতো এত প্রফেশনালস ছিল না। কারখানার মালিকেরাই দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করে ব্যবসা পরিচালনা করতেন। বর্তমানে ভালো মানের মধ্যম সারির কর্মকর্তা গড়ে উঠেছে, যারা অনেক বেশি প্রফেশনাল। অঙ্ক বোঝে। দায়িত্ব নিতে পারে। যদি তাদের সঠিক পারিশ্রমিক দেওয়া যায়, তাহলে ওপেক্সের মতো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব তারা নিতে পারবে।’