গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম আপাতত না বাড়াতে চিঠি দিল এফবিসিসিআই
গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব আপাতত স্থগিত রাখতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসকে গতকাল সোমবার চিঠি দিয়ে এই অনুরোধ জানান তিনি।
চিঠিতে জসিম উদ্দিন লিখেছেন, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন সংকটের ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, উৎপাদন উপকরণসহ সব খাতে ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি, মাত্রাতিরিক্ত পরিবহন ব্যয় এবং মুদ্রা বিনিময় হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা পরিচালনার খরচ অত্যধিক বেড়ে চলেছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি খাতে বিশ্বব্যাপী চাহিদা হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধিজনিত ব্যাপারে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাবে শিল্পকারখানাগুলোর বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে চলতি হিসাবে ঘাটতি হওয়ায় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে। সঞ্চয় কমে যাওয়ায় বিনিয়োগ ও ব্যাংক খাতের অর্থপ্রবাহে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
বর্তমান দুঃসময়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে মূল্যস্ফীতির কারণে বহুমাত্রিক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার উদ্ভব হবে। ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় বাড়বে। কৃষি, শিল্প, সেবা ও রপ্তানি খাতসহ সার্বিকভাবে সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে বলে মন্তব্য করেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন।
বর্তমান সময় আপত্কালীন উল্লেখ করে সব খাতে গ্যাসের মূল্যহার অপরিবর্তিত রাখার অনুরোধ জানায় এফবিসিসিআই। সংগঠনটি বলছে, দেশের গ্যাস সরবরাহের প্রায় ৭৮ শতাংশ দেশীয় উৎস থেকে আসে। বাকিটা আমদানি হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমদানি পর্যায়ে ভর্তুকি দিয়ে নতুন করে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর অনুরোধ করেছে ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠন।
দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে নিয়মিত কূপ খনন প্রকল্প গ্রহণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সব ধরনের অপচয় ও অবৈধ সংযোগসহ যাবতীয় দুর্বলতা দূর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার অনুরোধ করেন জসিম উদ্দিন।
গ্যাসের পাশাপাশি বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর অনুরোধের পাশাপাশি বেশ কিছু সুপারিশ করেছেন এফবিসিসিআই সভাপতি। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, অলস ও অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে। দৈনিক গড় ব্যবহারের অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ রিজার্ভ বিদ্যুতের সংস্থান রেখে অতিরিক্ত উৎপাদন বন্ধ করে খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব। খরচ কমাতে শুধু পিক আওয়ারে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র চলতে পারে।
এফবিসিসিআই সভাপতি লিখেছেন, জ্বালানি তেলের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো সমীচীন হবে না। সরকার বিদ্যুৎ খাতের তহবিল থেকে আপত্কালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে।
এদিকে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করতে আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী।
চিঠিতে বিটিএমএ সভাপতি লিখেছেন, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে ভোগ্যপণ্যসহ সব ধরনের কাঁচামালের মূল্য দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ফলে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাত টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।