গ্যাস-সংকটে সিরামিকে দিনে ৩ কোটি টাকার কম উৎপাদন

প্রথম আলো ফাইল ছবি

গ্যাস-সংকটের কারণে কয়েকটি এলাকার সিরামিক কারখানায় দিনে প্রায় তিন কোটি টাকার উৎপাদন কম হচ্ছে। এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না থাকায় কারখানায় পোড়ানোর অপেক্ষায় থাকা সিরামিক পণ্য নষ্ট হচ্ছে।

এ অবস্থায় স্বাভাবিক চাপে গ্যাস সরবরাহের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ)। সংগঠনটির নির্বাহী সচিব জাহেদী হাসান চৌধুরী গত সপ্তাহে এই চিঠি দেন।

বিসিএমইএ বলছে, সিরামিক খাতের তৈজসপত্র, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে গ্যাস-সংকটের কারণে। কয়েক দিন ধরে ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও ভালুকা এবং গাজীপুরের মাওনা, শ্রীপুর, জয়দেবপুর, ভবানীপুর ও ভাওয়াল মির্জাপুর এলাকার কারখানাগুলোতে তীব্র গ্যাস-সংকট চলছে। কারখানার উৎপাদন ক্ষমতাভেদে ১৫ পিএসআই (পাউন্ড পার স্কয়ারিংস-প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে গ্যাসের চাপের ইউনিট) পর্যন্ত লোড অনুমোদন করা থাকলেও গ্যাসের চাপ কখনো কখনো ১-২ পিএসআই থেকে শূন্যের কোঠায় নেমে আসছে।

চিঠিতে সংগঠনটি বলেছে, গ্যাস-সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ে পণ্য রপ্তানি করতে পারছে না কারখানাগুলো। তাতে রপ্তানি ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। অপ্রতুল গ্যাস সরবরাহের কারণে ময়মনসিংহ ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার কারখানার চুল্লি বন্ধ থাকছে। ফলে এসব এলাকায় প্রতিদিন তিন কোটি টাকার সিরামিক তৈজসপত্র, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যারের উৎপাদন কম হচ্ছে। একই সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের অভাবে কারখানায় পোড়ানোর অপেক্ষায় থাকা সিরামিক পণ্য নষ্ট হচ্ছে।

বিসিএমইএ বলছে, কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকলেও শ্রমিকের বেতন-ভাতা ও ব্যাংকঋণের কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ করতে হচ্ছে। তবে গ্যাস পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এগুলো চলমান রাখা কোম্পানিগুলোর পক্ষে সম্ভব হবে না।

বিসিএমইএর তথ্যানুযায়ী, সিরামিকের উপখাত তিনটি-তৈজসপত্র, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার। এসব পণ্য উৎপাদনের জন্য দেশে কারখানা রয়েছে ৬৮ টি। তার মধ্যে ২০টি তৈজসপত্র, ৩০টি টাইলসের ও ১৮টি স্যানিটারিওয়্যার কারখানা। দেশে সিরামিক পণ্যের বাজারের আকার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ বাজার স্থানীয় উৎপাদকদের দখলে। দেশের অভ্যন্তরে সবচেয়ে বড় বাজার টাইলসের, প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার। স্যানিটারিওয়্যারের বাজার ৯০০ কোটি আর তৈজসপত্রের বাজারের আকার প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। খাতটিতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৯ হাজার কোটি টাকার।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকায় নারায়ণগঞ্জ, সাভার, ধামরাই, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে অনেক বস্ত্রকলের গ্যাসের চাপ ১ দশমিক ৫০ পিএসআইয়ে নেমে গেছে। এতে কারখানার উৎপাদন সক্ষমতার ৭০ শতাংশই কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তাতে বস্ত্র খাতের গড় উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।

গ্যাসের সংকটে গাজীপুর ও আড়াইহাজার এলাকার বস্ত্রকল বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে এলএনজি টার্মিনাল করা হয়েছে। সেখানে বড় বড় জাহাজ ভিড়তে পারে। তারপরও কারখানাগুলো গ্যাস-সংকটে ভুগছে। সার কারখানায় গ্যাস দেওয়ার কারণে আমরা গ্যাস পাচ্ছি না। তিনি দ্রুত জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ বাড়ানোর দাবি করেন।’