চীন থেকে সরাসরি পণ্য আমদানিতে যুক্ত হচ্ছে নতুন জাহাজ

চট্টগ্রাম বন্দর
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

চীনের বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারে পণ্য পরিবহনের নতুন আরেকটি সেবা চালু হচ্ছে। ‘বেঙ্গল সার্ভিস’ নামে নতুন এই সেবা চালু করছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শিপিং কোম্পানি মেডিটেরিয়েন শিপিং কোম্পানি বা এমএসসি। ২৭ এপ্রিল হংকং বন্দর থেকে ‘এমএসসি কাইমি’ জাহাজ দিয়ে এই সেবার সূচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

বর্তমানে চীন থেকে সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া বন্দর হয়ে চট্টগ্রামে কনটেইনার পণ্য আনা-নেওয়া করছে ১৯টি জাহাজ। এর বাইরে বিপুলসংখ্যক কনটেইনার পণ্য চীন থেকে প্রথমে জাহাজে করে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার বন্দরে আনা হয়। পরে জাহাজ বদল করে সেগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়। এতে সময় লাগে বেশি। এ কারণে চীন থেকে সরাসরি পণ্য পরিবহনে আগ্রহ বেশি আমদানিকারকদের। যে ১৯টি জাহাজ বর্তমানে চীন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার পণ্য আনা-নেওয়া করছে সেগুলো সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া বন্দর হয়ে যাতায়াত করলেও জাহাজ থেকে কোনো কনটেইনার নামায় না। বরং সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় কয়েক ঘণ্টার বিরতি দিয়ে সেখান থেকে পণ্যবোঝাই কিছু কনটেইনার জাহাজে তুলে আবার চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করে।

বেঙ্গল সার্ভিস নামের নতুন সেবা চালু হলে তাতে চীন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে সরাসরি যাতায়াতকারী জাহাজের সংখ্যা বাড়বে। জাহাজের সংখ্যা বাড়লে সময় কমে সমুদ্রপথে পরিবহন ব্যয়ও তুলনামূলক সাশ্রয় হবে বলে জানান আমদানিকারকেরা।

বাংলাদেশের আমদানি পণ্যের বড় একটি অংশই আসে চীন থেকে। ২০২০-২১ অর্থবছর দেশটি থেকে ১২ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। রপ্তানিমুখী পোশাক খাতের কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও বাণিজ্যিক পণ্য—সবই আসে চীন থেকে। এসব পণ্যের বড় অংশই আমদানি হয় কনটেইনারে।

বেঙ্গল সার্ভিস চালু হলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে পোশাক খাত। কারণ, পোশাকের কাঁচামালের সিংহভাগই আসে চীন থেকে। জানতে চাইলে বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সরাসরি জাহাজ সেবার বড় উপকারভোগী পোশাকশিল্প। কারণ, এতে কাঁচামাল আমদানিতে কম করে হলেও পাঁচ থেকে সাত দিন সময় বাঁচে। চীন থেকে যত জাহাজ সরাসরি সেবা চালু করবে, ততই পোশাক খাত সুবিধা পাবে।

জানা গেছে, শুরুতে চারটি জাহাজ দিয়ে বেঙ্গল সার্ভিস চালু হলেও পর্যায়ক্রমে ছয়টি জাহাজ যুক্ত হবে এই সেবায়। হংকং বন্দর থেকে শুরু হয়ে চীনের ইয়ানতিন ও সেকু বন্দরে কনটেইনার পণ্য বোঝাই করবে এই সেবার আওতায় পরিচালিত জাহাজগুলো। এরপর সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার বন্দরে থেকে আরও কনটেইনার বোঝাই করে চট্টগ্রামে ফিরবে এসব জাহাজ। একইভাবে চট্টগ্রাম থেকে এসব বন্দর হয়ে চীনে যাবে।

মেডিটারিয়েন শিপিং কোম্পানির সহকারী মহাব্যবস্থাপক আজমীর হোসাইন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, নতুন সেবায় ১২-১৩ দিনেই চীন থেকে জাহাজে করে কনটেইনার পণ্য চট্টগ্রামে আনা সম্ভব হবে। হংকং থেকে সময় লাগবে ১৫ দিন। তাতে অন্তত ৮-১০ দিন কম সময়ে পণ্য হাতে পাবেন বাংলাদেশের আমদানিকারকেরা।

শিপিং কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, চীন থেকে সরাসরি কনটেইনার পণ্য পরিবহনের সেবা চালু হয় সাত বছর আগে। বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ শিপিং কোম্পানি মার্সক লাইনের ছয়টি জাহাজ চীন থেকে মালয়েশিয়া হয়ে সরাসরি পণ্য পরিবহন করছে। দক্ষিণ কোরিয়ার দুটি আন্তর্জাতিক শিপিং লাইনের (হুন্দাই ও সিনোকর) পাঁচটি জাহাজও চীন থেকে পণ্য পরিবহন করে। এসআইটিসি কনটেইনার লাইনস ও সিএনসি নামের দুটি শিপিং কোম্পানি যৌথভাবে পাঁচটি জাহাজ দিয়ে চায়না বাংলাদেশ এক্সপ্রেস নামে একটি সেবা পরিচালনা করছে। কসকো শিপিং লাইন তিনটি জাহাজ দিয়ে চীন থেকে কনটেইনার পণ্য আনা-নেওয়া করছে।

চট্টগ্রামের কন্টিনেন্টাল ট্রেডার্সের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ওশান ইন্টারন্যাশনাল কোরিয়ার হুন্দাই মার্চেন্ট মেরিনের স্থানীয় প্রতিনিধি। একইভাবে চীনের কসকো কোম্পানির স্থানীয় এজেন্টও কন্টিনেন্টাল ট্রেডার্স। কন্টিনেন্টাল ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান ইকবাল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সরাসরি জাহাজসেবার আওতায় সবচেয়ে বেশি আসছে পোশাক খাতের কাঁচামাল। এ ধরনের সেবা যত বেশি বিস্তৃত হবে, ততই এ দেশের রপ্তানিমুখী খাত সুফল পাবে।