ঢাকার বুকে ছোট্ট এক সবুজ শহর

রাজধানীর উত্তরায় রূপায়ন সিটি উত্তরা নামের প্রকল্পে মনোরম এই পরিবেশেই গড়ে উঠছে সারি সারি ভবনছবি: খালেদ সরকার

১২০ ফুট প্রশস্ত ঝকঝকে–তকতকে সড়ক। তার দুই পাশ ও মাঝের সড়কদ্বীপে পাম, খেজুরসহ নানা প্রজাতির গাছ। ফুটপাতে গাছের নিচে সময় কাটানোর জন্য আছে বসার জায়গা। সড়কবাতিগুলোও বেশ দৃষ্টিনন্দন। মনোরম এই পরিবেশেই গড়ে উঠছে সারি সারি ভবন। প্রতিটি ভবনের নকশাও আবার একই রকম। ভবনের সামনে-পেছনে খোলা জায়গা থাকায় অ্যাপার্টমেন্টের ভেতর থেকেই আকাশ দেখার সুযোগ যেমন আছে, তেমনি পাওয়া যাবে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস।

রাজধানী ঢাকার উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের শেষ মাথায় ১৩৪ বিঘা জমির ওপর এমনই এক আধুনিক শহর গড়ে তুলছে রূপায়ন গ্রুপ। রূপায়ন সিটি উত্তরা নামের এই প্রকল্পে স্কুল, খেলার মাঠ, মসজিদ, ব্যায়ামাগার, সুপারশপ, শপিং মল, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, চার তারকা মানের হোটেলসহ সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। তারপরও পুরো প্রকল্পের ৬৩ শতাংশ জায়গাই খোলা, মানে সেখানে কোনো ধরনের স্থাপনা থাকবে না। তার মধ্যে ৪১ শতাংশে থাকবে সবুজ গাছপালা। প্রকল্পের ভেতরে সব মিলিয়ে থাকছে সাড়ে ছয় কিলোমিটার সড়ক। সেই সড়ক কিংবা ফুটপাত দিয়েই সকাল বা বিকেলের জগিংটা করে নেওয়া যাবে সহজেই।

রূপায়ন সিটি উত্তরায় চারটি ফেজ বা পর্যায় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে তিনটি আবাসিক ও একটি বাণিজ্যিক প্রকল্প। আবাসিকের মধ্যে দুটি ফেসে গ্র্যান্ড ও ম্যাজিস্টিক নামে প্রিমিয়াম মানের কনডোমিনিয়াম করা হচ্ছে। অন্যটি স্কাই ভিলা, যা মূলত দ্বিতল অ্যাপার্টমেন্ট। সব কটি ভবনই একটি বেসমেন্টসহ নয়তলা হবে।

উত্তরার হাউস বিল্ডিং থেকে রিকশায় চড়ে মাত্র ৮-১০ মিনিটে আমরা গত বুধবার দুপুরে রূপায়ন সিটি উত্তরার মূল ফটকে পৌঁছে যাই। ফটক পেরিয়ে ডান পাশে প্রকল্পের কার্যালয় রেখে এগিয়ে যেতেই ধীরে ধীরে সামনে দৃশ্যমান হতে থাকল গাছ, ঝকঝকে সড়ক আর সারি সারি ভবন। রূপায়নের সহকারী বিপণন ব্যবস্থাপক সুরঞ্জিত ঘোষ আমাদের পুরো প্রকল্প ঘুরিয়ে দেখালেন।

রূপায়ন সিটি উত্তরায় চারটি ফেজ বা পর্যায় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে তিনটি আবাসিক ও একটি বাণিজ্যিক প্রকল্প। আবাসিকের মধ্যে দুটি ফেসে গ্র্যান্ড ও ম্যাজিস্টিক নামে প্রিমিয়াম মানের কনডোমিনিয়াম করা হচ্ছে। অন্যটি স্কাই ভিলা, যা মূলত দ্বিতল অ্যাপার্টমেন্ট। সব কটি ভবনই একটি বেসমেন্টসহ নয়তলা হবে।

স্কাই ভিলার দুটি ভবন ইতিমধ্যে দাঁড়িয়ে গেছে। তার একটি ঢুকতেই দৃষ্টিনন্দন এক জলাধার আমাদের স্বাগত জানাল। শৈল্পিক এই স্থাপনার মাঝখানে রয়েছে গাছ। এক পাশে বসে আড্ডা দেওয়ার জায়গাও আছে। দোতলায় একটি সাজানো গোছানো নমুনা স্কাই ভিলা ঘুরে দেখার সুযোগ হলো। প্রশস্ত বারান্দার মেঝেতে ঘাসের ওপর দাঁড়িয়ে আকাশে মেঘের ওড়াউড়ি দেখতে বেশ। আরেক পাশের বারান্দায় দাঁড়ালেই চোখে পড়বে সেই জলাধার। ভিলার প্রথম তলায় ডাইনিং, ড্রয়িং এবং কিচেন রুমের পাশাপাশি একটি শয়নকক্ষ রয়েছে। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলেই আরও কয়েকটি শয়নকক্ষ।

সবুজ শহরটি পরিপূর্ণ করতে ৩০ বিঘা জমির ওপর চারটি বেসমেন্ট ছাড়াও ১০ তলা মাল্টি কমার্শিয়াল ভবন করছে রূপায়ন গ্রুপ। ম্যাক্সাস নামের ভবনের আটটি টাওয়ারের সাতটিতে থাকবে হেলিপ্যাড।

রূপায়ন সিটি উত্তরার সব বাসিন্দার জন্য একটি কমিউনিটি ক্লাব ভবন করা হচ্ছে। সেখানকার ছাদে সুইমিংপুল থাকবে। তা ছাড়া অতিথিদের রাত্রিযাপনের জন্য আবাসন, ব্যায়ামাগার, ইনডোর গেমস এবং একবারে দুই হাজার মানুষ নিয়ে সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য হল থাকবে। আর পুরো শহরের ব্যবস্থাপনা রূপায়ন নিজেরাই করবে।

সবুজ শহরটি পরিপূর্ণ করতে ৩০ বিঘা জমির ওপর চারটি বেসমেন্ট ছাড়াও ১০ তলা মাল্টি কমার্শিয়াল ভবন করছে রূপায়ন গ্রুপ। ম্যাক্সাস নামের ভবনের আটটি টাওয়ারের সাতটিতে থাকবে হেলিপ্যাড। প্রায় ৩০ লাখ বর্গফুটের জায়গায় থাকবে চার তারকা মানের হোটেল, শপিং মল, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ফুডকোর্ট, ক্যাফেটেরিয়া, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক। মাল্টি কমার্শিয়াল এই ভবনের পাইলিং অনেক দূর এগিয়েছে। মূল কাজ আগামী ডিসেম্বরে শুরু হওয়ার কথা।

২০১৪ সালে বিশাল এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে রূপায়ন। আগামী বছরের ৩১ মার্চ থেকে ম্যাজিস্টিক কনডোমিনিয়াম গ্রাহকদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে আগামী ছয় থেকে সাত বছরের মধ্যে—এমনটাই জানালেন রূপায়নের ভাইস চেয়ারম্যান মাহির আলী খান। তিনি বললেন, আবাসন খাতে রূপায়ন শুরু থেকেই নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করছে।

পরিকল্পিত শহর করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, একক ভবনের প্রকল্পে থাকার জায়গার সমাধান দেওয়া যায়; তবে অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা যেসব দরকার, তা দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই আমরা মানুষের জীবন ও জীবিকার মান উন্নয়নের চিন্তাভাবনা থেকে পরিকল্পিত সবুজ শহর করার স্বপ্ন দেখেছি, যা বর্তমানে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে। এখানে ফ্ল্যাট কেনা মানে শহর কেনা।

গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায় শহর করলে তা অনেক পেশাজীবী মানুষের নাগালে চলে যেত। তাই উত্তরার মতো জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মাহির আলী খান। তিনি বলেন, ‘রূপায়ন সিটি উত্তরায় যাঁরা বসবাস করবেন, তাঁদের সর্বোত্তম সেবা দেওয়ার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত গবেষণা করেছি। তিন-চারটি ভবনের বেসমেন্ট একসঙ্গে করা হয়েছে। তাতে ভূমিকম্প হলে সাধারণ ভবনের চেয়ে অনেক বেশি চাপ নিতে পারবে। অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা ঘটলে ভবনের চার পাশ থেকে ফায়ার ফাইটাররা কাজ করতে পারবেন।

সন্ধ্যা নামলেই সড়কদ্বীপ, ফুটপাত ও চৌরাস্তার মাঝের ফোয়ারায় হরেক রকমের বাতি জ্বলে ওঠে। তখন রূপায়ন সিটি উত্তরার পরিবেশটা হয় দেখার মতো। সেই আলো-আঁধারির মাঝে পরিবার–পরিজন নিয়ে ঘুরে ঘুরে সেখানকার একটা কনডোমিনিয়াম বা স্কাই ভিলায় থাকার সুযোগ অনেকেই নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে ম্যাজিস্টিকের ৭০ শতাংশ অ্যাপার্টমেন্টের বিক্রি শেষ হয়েছে।