পোশাক ও বস্ত্র খাত
তুলার বাজারে অস্থিরতা, বাড়তে পারে সুতার দাম
চলতি মাসজুড়ে তুলার মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ডিসেম্বরের দিকে সুতার দাম ১৫ শতাংশের মতো বাড়তে পারে বলে উদ্যোক্তাদের আশঙ্কা।
প্রচুর ক্রয়াদেশ থাকলেও নানান সমস্যা পিছু ছাড়ছে না দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের। চীনে বিদ্যুৎ-সংকটের কারণে বস্ত্রকলগুলো পুরোদমে উৎপাদন করতে পারছে না। সে জন্য সময়মতো কাঁচামাল পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে অধিকাংশ ওভেন কারখানা।
এদিকে বিশ্ববাজারে তুলার দাম আবার বাড়ছে। ফলে সুতার মূল্যবৃদ্ধির শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সেটি হলে বিপদে পড়তে পারেন নিট পোশাক কারখানার মালিকেরা।
সুতার মূল্যবৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছেন বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর নেতারা। তাঁরা বলছেন, গত এক দশকে বিশ্ববাজারে তুলার দামের সূচক (ইনডেক্স) সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এটি চলতি মাসজুড়ে অব্যাহত থাকলে ডিসেম্বরে সুতার দাম বাড়তে পারে ১৫ শতাংশের মতো। তাই নতুন ক্রয়াদেশ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে দর-কষাকষিতে পোশাকশিল্পের মালিকদের সতর্ক থাকতে হবে।
এখন ক্রয়াদেশ দিয়ে নভেম্বরের মধ্যে সুতা সরবরাহ নিলে দাম বাড়বে না। তবে তুলার দামের সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকলে সুতার দাম ডিসেম্বরে বাড়বে।মোহাম্মদ আলী, সভাপতি, বিটিএমএ।
রাজধানীর পান্থপথে বিটিএমএ ভবনে গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, সুতার দাম নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় স্পিনারদের খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ নেই। কারণ, তুলা আন্তর্জাতিক পণ্য। গত আগস্টেও তুলার বৈশ্বিক মূল্যসূচক ১০০ পয়েন্টের নিচে ছিল। গত মাসের শেষ দিকে তা ১০০ পয়েন্ট স্পর্শ করে। চলতি মাসে সেটি আরও বেড়েছে। আজ (গতকাল) তুলার দামের সূচক ১০৫ পয়েন্ট, যা গত শুক্রবার ছিল ১০৭ পয়েন্ট।
বিটিএমএর সভাপতি বলেন, ক্রয়াদেশ দেওয়ার পর আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে তুলা আনতে এক মাস সময় লাগে। আমেরিকার তুলা আনতে লাগে দুই মাস। ফলে তুলার দামের সূচক যদি চলতি মাসজুড়ে এখনকার মতো ঊর্ধ্বমুখী থাকে, তাহলে সুতার দাম ডিসেম্বরে বাড়াতে হবে।
সুতার বাড়তি দাম নিয়ে হঠাৎ করে গত সেপ্টেম্বরে পোশাক ও বস্ত্র খাতের মালিকেরা মুখোমুখি অবস্থানে চলে যান। তখন শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় বৈঠকে বসেন বিটিএমএ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিটিএলএমইএর নেতারা। ২১ আগস্ট দ্বিতীয় সভায় তিন সংগঠনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত হয়, পোশাকশিল্পে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্রতি কেজি ৩০ কার্ডেড সুতার সর্বোচ্চ দাম হবে ৪ ডলার ২০ সেন্ট। তবে সভায় এ কথাও বলা হয়, বিশ্ববাজারে তুলার দামের সূচক ১০০ পয়েন্ট ছাড়িয়ে গেলে দাম আবার বাড়বে আর সূচক যদি ৮৫ পয়েন্ট বা তার নিচে নামে, তাহলে সুতার দাম কমবে। তা ছাড়া পিআইয়ের (প্রোফর্মা ইনভয়েস বা বিক্রেতা বস্ত্রকলের আনুষ্ঠানিক দাম) মেয়াদ ৭ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন করা হয়।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিশ্ববাজারে তুলার দামের সূচক বাড়তি। সেটি যদি অব্যাহত থাকে এবং দুই-তিন মাস পর সুতার দাম বাড়ে, তাহলে আপত্তি নেই। কারণ, আজ তুলার ক্রয়াদেশ দিলে সেটি দেশে আসতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে। সমস্যা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে তুলার দাম কিছুটা বাড়তি থাকায় ইতিমধ্যে ৩০ কার্ডেড সুতার দাম ৪ ডলার ৪০ সেন্ট দাবি করতে শুরু করেছে কিছু স্পিনিং মিল। হঠাৎ করে সুতার দাম বাড়লে সব নিট পোশাকমালিকই ক্ষতির মুখে পড়বেন।
এদিকে বাড়তি ক্রয়াদেশের সুফল পেতে শুরু করেছেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। গত সেপ্টেম্বরে ৩৪২ কোটি মার্কিন ডলার বা ২৯ হাজার ৭০ কোটি টাকার তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪১ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। এটিই দেশের ইতিহাসে কোনো এক মাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ পোশাক রপ্তানির রেকর্ড।
এদিকে বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত আগস্ট থেকে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত তুলার দাম বাড়তি থাকার পূর্বাভাস রয়েছে। সেই আশঙ্কার কথা গতকাল (সোমবার) বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সভাপতিকে অবহিত করেছি। এখন ক্রয়াদেশ দিয়ে নভেম্বরের মধ্যে সুতা সরবরাহ নিলে দাম বাড়বে না। তবে তুলার দামের সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকলে সুতার দাম ডিসেম্বরে বাড়বে।’