দেনায় জড়িয়েছেন পোশাকশ্রমিকেরা

ছবি: খালেদ সরকার

কোভিডের অভিঘাতে ২০২০ সালে ৩৫ ভাগ তৈরি পোশাকশ্রমিকের বেতন কমে যায়। বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া, করোনার কারণে বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়া, জাহাজীকরণে বিলম্ব, সময়মতো পণ্যের দাম না পাওয়াসহ বিবিধ কারণে এই খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে শ্রমিকদের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। অনেক ব্যবসা সংকুচিত হয়। চাকরি চলে যায় অনেকের। আবার যাঁদের চাকরি যায়নি, তাঁদের অনেকের উপার্জন কমে যায়।

কিন্তু উপার্জন কমলে তো আর ব্যয় কমে না। এই বাস্তবতায় তৈরি পোশাকশ্রমিকেরা বাধ্য হয়ে দেনায় জড়িয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।

‘দ্য উইকেস্ট লিংক ইন গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন: হাউ দ্য প্যানডেমিক ইজ অ্যাফেক্টিং বাংলাদেশ গার্মেন্টস ওয়ার্কার’ বা ‘বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থার দুর্বলতম অংশীদার বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশ্রমিকেরা মহামারিতে কীভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন’ শীর্ষক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির ফলে তৈরি পোশাকশ্রমিকদের ঝুঁকিহ্রাসের জন্য আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিতের সুপারিশ করা হয়েছে গবেষণায়।

ভার্চ্যুয়াল এই অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ইউএনডিপির স্থানীয় প্রতিনিধি বা রেসিডেন্ট রিপ্রেজেনটেটিভ সুদীপ্ত মুখার্জি। তিনি স্থায়ী উন্নয়ন নিশ্চিতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়সহ সবাইকে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

ইউএনডিপি ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির চৌধুরী সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ ও ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান রাইটস পরিচালিত এই গবেষণায় করোনার সময় তৈরি পোশাকশ্রমিক বিশেষ করে নারী কর্মীদের বিভিন্ন ঝুঁকির চিত্র উঠে এসেছে।

আলোচনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আবদুস সালাম চলমান করোনাকালীন বিধিনিষেধের মধ্যে তৈরি পোশাকশ্রমিকদের জন্য সরকারের গৃহীত উদ্যোগের বিবরণ দেন। পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

গবেষণার অংশ হিসেবে অক্টোবর ২০২০ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রেতা, বাংলাদেশি সরবরাহকারী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশ্রমিকদের বিশদ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির ফলে পোশাকশ্রমিকদের ঝুঁকিহ্রাসের জন্য আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বিধিবিধান প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে গবেষণায়।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় পোশাকশ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ যেমন আইসোলেশন সেন্টার, পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালুর বিভিন্ন দিক আলোচনা করেন তিনি। ফারুক হাসান কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিজিএমইএর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

সুইডিশ সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত ওই গবেষণায় আগের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করার আহ্বান জানান গবেষকেরা।