পুরোনো ফ্ল্যাটও এখন হাতের নাগালে

বিপ্রপার্টিতে এখন ১৩ হাজারের বেশি পুরোনো ফ্ল্যাট আছে। এর বেশির ভাগই মিরপুর এলাকার। মিরপুর এলাকায় ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুটে সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। আর বাড্ডা, বনশ্রী ও মোহাম্মদপুর এলাকায় প্রতি বর্গফুট গড়ে ৫ হাজার টাকা, বসুন্ধরা আবাসিকে ৮ হাজার টাকা, উত্তরায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা, ধানমন্ডিতে ৬ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চলতি বছরের মে–জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট–অক্টোবরে ঢাকায় পুরোনো ফ্ল্যাটের গ্রাহক অনুসন্ধান বেড়েছে ৪১ শতাংশ।

ঢাকার পান্থপথের একটি বহুতল আবাসন প্রকল্প।
ছবি: প্রথম আলো

নিজের একটি ফ্ল্যাট, সেটা নতুন কেনার সাধ্য সবার না–ও হতে পারে। তাই অনেকেই এখন একটু কম দামের মধ্যে পুরোনো ফ্ল্যাট খুঁজে থাকেন। রাজধানীর দেয়ালে দেয়ালে যেমন পুরোনো ফ্ল্যাট বিক্রির প্রচারপত্র দেখা যায়, আবার বিভিন্ন অনলাইনও সয়লাব এমন প্রচারণায়। পাশাপাশি দৈনিক পত্রিকা খুললেই এখন ব্যবহৃত বা পুরোনো ফ্ল্যাট বিক্রির বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। এসবে আপনার পুরো আস্থা না–ও হতে পারে।

এ জন্য এখন সময় অনেকটা বদলে গেছে। পুরোনো ফ্ল্যাট বিক্রির মধ্যস্থতায় গত কয়েক বছরে যুক্ত হয়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে এ ব্যবসাকেও একধরনের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এর মাধ্যমে ফ্ল্যাট বিক্রি থেকে এসব প্রতিষ্ঠান কমিশন পাচ্ছে। তবে শুধু পুরোনো নয়, নতুন ফ্ল্যাট ও প্লটও বিক্রি করছে এসব প্রতিষ্ঠান। যদিও এ ব্যবসার বড় অংশ এখনো রাজধানীকেন্দ্রিক।

পুরোনো ফ্ল্যাট বিক্রির ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে, এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বিপ্রপার্টি, রাতুল প্রপার্টিজ, বিটিআই ব্রোকারেজ, অ্যাসেট ডেভেলপমেন্টস, বিডি হাউজিং। এ ছাড়া আরও অনেক প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরোনো ফ্ল্যাট বিক্রির মধ্যস্থতা করছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন ফ্ল্যাটের বেশি দামের কারণে নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যে পুরোনো ফ্ল্যাট কেনার চাহিদা বেশি। তবে ফ্ল্যাটের নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) ব্যয় কমানোর পাশাপাশি নামজারিসহ বিভিন্ন দলিল হালনাগাদ ও ব্যাংকঋণ-প্রক্রিয়া সহজ করা হলে পুরোনো ফ্ল্যাট বিক্রি কয়েক গুণ বাড়বে বলে মনে করেন তাঁরা।

দেশের আবাসন খাতের প্রথম সারির একটি প্রতিষ্ঠান বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস লিমিটেড (বিটিআই)। ২০১৫ সালের শেষ দিকে পুরোনো ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক স্পেস কেনাবেচা ও ভাড়ার ব্যবসা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য বিটিআই ব্রোকারেজ নামে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ রয়েছে তাদের। বৈধ কাগজপত্র থাকলে যে কেউ পুরোনো ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক ভবন বিক্রির জন্য প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করতে পারেন। চুক্তি অনুযায়ী, পুরোনো ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি পুরো প্রক্রিয়াটি দেখভাল করে তারা। ব্যক্তিসম্পত্তি ছাড়া যেকোনো আবাসন প্রতিষ্ঠান তাদের নতুন বা পুরোনো, এমনকি নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক স্পেস বিটিআই ব্রোকারেজের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট কমিশন নেয় প্রতিষ্ঠানটি। আবার পুরোনো ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক স্পেস নিজেরা কিনেও বিক্রি করে থাকে। এখন বিটিআই ব্রোকারেজে বিক্রির জন্য প্রায় ৮০০ ফ্ল্যাট রয়েছে।

আবাসন খাতের আরেক প্রতিষ্ঠান অ্যাসেট ডেভেলপমেন্টস তিন বছর ধরে পুরোনো ফ্ল্যাট বিক্রির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। অবশ্য বর্তমানে নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশনের ভিত্তিতে তারা শুধু তাদের নিজস্ব আবাসন প্রকল্পের পুরোনো ফ্ল্যাট বিক্রিতে মধ্যস্থতা করছে। ক্রেতাদের আর্থিক সংকট থাকলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের ব্যবস্থা ও কয়েক মাসের কিস্তি সুবিধা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

পুরোনো ফ্ল্যাট কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর মগবাজার, উত্তরা, বসুন্ধরা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও মিরপুর এলাকায় পুরোনো ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি। পুরোনো ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে নতুন ফ্ল্যাটের চেয়ে সাধারণত প্রতি বর্গফুটে দুই হাজার টাকা কম পাওয়া যায়।

বিক্রির জন্য প্রস্তুত পুরোনো ফ্ল্যাটগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহাম্মদপুর এলাকার ১ হাজার ৩৩৫ বর্গফুট ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য ৬৯ লাখ টাকা দাম চাওয়া হয়েছে। গুলশান এলাকায় ১ হাজার ২৫০ বর্গফুটের পুরোনো ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য ৫৬ লাখ টাকা দাম ধরা হয়েছে। বনশ্রীতে ১ হাজার ৫ বর্গফুট ফ্ল্যাটের দাম চাওয়া হচ্ছে ৪৮ লাখ টাকা।

পুরোনো ফ্ল্যাটের দাম শুধু এলাকার ওপর নির্ভর করে না। ফ্ল্যাটের সার্বিক অবস্থা, যোগাযোগব্যবস্থা, পার্কিং, আশপাশে কী ধরনের স্থাপনা আছে, তার ওপরও নির্ভর করে। পাশাপাশি ফ্ল্যাটটি কত দিন ব্যবহার করা হয়েছে, তা–ও দামের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।

নতুনের পাশাপাশি পুরোনো ফ্ল্যাট বিক্রি করে বিপ্রপার্টি। ২০১৬ সালে ইমার্জিং মার্কেটস প্রপার্টি গ্রুপের (ইএমপিজি) এই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে ভাড়া ও বিক্রির জন্য বর্তমানে ১৩ হাজারের বেশি ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক স্পেস আছে। ৩ থেকে ৫ শতাংশ কমিশন নিয়ে পুরোনো ফ্ল্যাট বিক্রির মধ্যস্থতা করে তারা।

ফ্ল্যাট বিক্রি করতে চাইলে প্রথমে বিপ্রপার্টির ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হবে। তারপর প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সরেজমিনে তা যাচাই-বাছাই করে দেখেন। তারপরই তা ওয়েবসাইটে বিক্রির জন্য প্রকাশ করা হয়। এসব তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের বিপণন ও জনসংযোগ বিভাগের প্রধান মাহজাবীন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরোনো ফ্ল্যাটের বিক্রি বছর বছর বাড়ছে। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তার ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, ঢাকায় মোহাম্মদপুর ও উত্তরায় পুরোনো ফ্ল্যাটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।’

একইভাবে রাতুল প্রপার্টিজও পুরোনো ফ্ল্যাট বিক্রি করছে। রাতুল প্রপার্টিজ ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত। এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি ক্রেতা-বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটির সেবা নিয়েছেন।

রাতুল প্রপার্টিজের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী নুর রহমান বলেন, রাতুল প্রপার্টিজ ২০০৬ সাল থেকে সুনামের সঙ্গে প্লট-ফ্ল্যাট ও কমার্শিয়াল স্পেস ক্রয়-বিক্রয়ের মার্কেটপ্লেস হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের সেবাগুলোকে গতিশীল ও ভোক্তাকেন্দ্রিক করতে দক্ষ জনবলের মাধ্যমে প্রপার্টি–সংক্রান্ত লিগ্যাল সাপোর্ট দিচ্ছে।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার গুলশান, বসুন্ধরা, উত্তরা, বনানী, ধানমন্ডি, মিরপুর, বাংলামোটর ও পল্টনে আবাসিক ভবন বা বাণিজ্যিক ভবনের জায়গা ক্রয়-বিক্রয় ও এক্সচেঞ্জ করে আসছে। ভবিষ্যতে সারা দেশে সেবা ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।