প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিতে বললেন ব্যবসায়ীরা

দেশের শিল্প খাতে চাহিদামাফিক জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি ও উৎপাদনে জোর দেওয়া প্রয়োজন।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের শিল্প খাতে জ্বালানি উৎসের ভবিষ্যৎ: এলপিজি এবং এলএনজি’ শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনায় বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেছেন। গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির সাবেক পরিচালক (অপারেশন) খন্দকার সালেক সুফী।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হতে হলে শিল্প খাতে চাহিদামতো জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। সে জন্য দ্রুততার সঙ্গে এলপিজি ও এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করতে হবে। এ ছাড়া খাতটির সার্বিক উন্নয়নে একটি সমন্বিত টেকসই কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান আমের আলীহোসেন বলেন, জ্বালানির জন্য শুধু একটি উৎসের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। বাপেক্সকে আরও আধুনিকায়ন করা দরকার। এ ছাড়া দেশের পশ্চিমাঞ্চলে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় সেখানে আশানুরূপ শিল্পায়ন হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বস্ত্রকল, ডাইং ও স্পিনিং কারখানায় দেশের ৭-৮ শতাংশ গ্যাস ব্যবহৃত হয়। পোশাক ও বস্ত্র খাতে এলপিজি ও এলএনজি স্বল্পমেয়াদি সমাধান হতে পারে।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ডিন এম শামসুল আলম বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি মূল্যের যৌক্তিকীকরণ ও ক্ষেত্রবিশেষে মূল্য হ্রাস করা প্রয়োজন। তিনি ভবিষ্যৎ শিল্পায়নের স্বার্থে প্রাকৃতিক গ্যাসকে আরও প্রাধান্য দেওয়ার ওপর জোর দেন।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, বর্তমানে ৩৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের মধ্যে নিজস্ব খাত থেকে আসে ৭৪ শতাংশ। ২৬ শতাংশের জোগান দেয় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০৩০ সালে দেশীয় উৎপাদন কমে সাড়ে ১৬ শতাংশে নামবে। তাতে শিল্পসহ সব খাতে পণ্য উৎপাদনের ব্যয় বাড়বে। এমন বাস্তবতায় অনুসন্ধান কার্যক্রম বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেন, সরকার গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, জকিগঞ্জ থেকে দীর্ঘ সময় ধরে গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। এ জন্য প্রায় ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পাইপলাইন স্থাপন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, করোনাকালেও ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা হয়েছে।

আনিছুর রহমান জানান, এলএনজি ব্যবসায় ঝুঁকি কম থাকায় বর্তমানে সবাই সেদিকে ঝুঁকছে। ২৯টি কোম্পানি স্থানীয় বাজারে এলপিজি অপারেটর হিসেবে কাজ করছে। তবে অনুমোদন পেয়েছে ৫৬টি। ছোট ছোট জাহাজে এলপিজি আমদানি করায় খরচ বাড়ছে। মাতারবাড়ীতে এলপিজি টার্মিনালের কার্যক্রম চালু হলে খরচ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমবে।