বাজেট হতে হবে উদ্যোক্তাবান্ধব

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হবে ৯ জুন, বৃহস্পতিবার। দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা, বাজেট হবে উদ্যোক্তাবান্ধব। এ জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার কথা বলেছেন কেউ কেউ। বাজেট সামনে রেখে বিভিন্ন খাতের ছয়জন তরুণ উদ্যোক্তা তাঁদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। কথা বলেছেন মাসুদ মিলাদ, শুভংকর কর্মকার, সুমন কুমার দাশউত্তম মণ্ডল

শাকিল জামান

একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে আমার প্রত্যাশা, এবারের বাজেট হবে উদ্যোক্তাবান্ধব। কয়েক বছর ধরেই আলোচনা চলছে, নতুন উদ্যোক্তা তৈরির কথা বলা হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথাও শুনে আসছি অনেক দিন ধরে।

আমি মনে করি, বাজেটের মাধ্যমে শুধু উদ্যোক্তা তৈরির রাস্তা করে দিলে হবে না, উদ্যোক্তাদের কীভাবে টিকিয়ে রাখা যায়—এ ব্যাপারে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিসিএসের উত্তীর্ণ হওয়ার পরও বিপুল মেধাবী তরুণ এখন উদ্যোক্তা হতে চান, এ আশায় বিনিয়োগও করেন। কিন্তু সঠিক দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতা না পেয়ে অধিকাংশই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং পরে ব্যবসা গুটিয়ে নেন।

উদ্যোক্তাবান্ধব বাজেট হতে হবে তরুণ উদ্যোক্তাদের রক্ষাকবচ। একজন তরুণ উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে দিনরাত খাটেন। যদি কোনোভাবে আশার আলো দেখতে পান, তখন তাঁদের আয়কর, মূল্য সংযোজন করসহ নানা ধরনের করের চাপে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে হয়।

তাই তরুণ উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে উৎপাদন খাতে বিনিয়োগে পাঁচ বছর পর্যন্ত সব ধরনের করমুক্ত সুবিধা দেওয়া দরকার। এ সময়ের মধ্যে একজন উদ্যোক্তা নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবেন। শুরু থেকেই যদি তরুণ উদ্যোক্তাদের করের চাপে ফেলা হয়, তাহলে তাঁদের উদ্যোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাবে।

আমি প্রাণী ও প্রাণিজাত পণ্যের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, বাজেটে এ খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হলে এ খাতের উদ্যোক্তারা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন। বিশ্বের যেসব দেশ প্রাণিসম্পদ খাতে উন্নতি করেছে, তাদের প্রত্যেকেই এ খাতে ব্যাপক ভর্তুকি দিয়েছে।

আমাদের বাজেটেও যদি প্রাণিখাদ্যে ভর্তুকি দেওয়া হয় এবং বাজার স্থিতিশীল রাখা যায়, তাহলে এ খাতে বিপ্লব ঘটবে। পাশাপাশি প্রাণী থেকে উৎপাদিত পণ্য বহুমুখীকরণেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ গুঁড়া দুধ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। সরকার যদি গরুর খামারিদের গোখাদ্যে ভর্তুকি ও ঘাস উৎপাদনে খাসজমি বরাদ্দ দেয়, তাহলে খামারিরা কম খরচে দুধ উৎপাদন করতে পারবেন।

ভবিষ্যতের শিল্পবিপ্লব আধুনিক কৃষিতেই হবে বলে আমার বিশ্বাস। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে যে দেশ বিশ্ববাজারে খাদ্য সরবরাহ করবে, তারাই বিশ্বে চালকের আসনে বসবে।

তাই আমার প্রত্যাশা, সরকার আধুনিক কৃষি উৎপাদনে মনোযোগী হবে। কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণের অভাবে কৃষক সঠিক দাম পান না, তাই কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণ এবং এ খাতে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতেও সরকারকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

শাকিল জামান, পরিচালক, দুধওয়ালা লিমিটেড, সিলেট