ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হবে ৯ জুন, বৃহস্পতিবার। দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা, বাজেট হবে উদ্যোক্তাবান্ধব। এ জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার কথা বলেছেন কেউ কেউ। বাজেট সামনে রেখে বিভিন্ন খাতের ছয়জন তরুণ উদ্যোক্তা তাঁদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। কথা বলেছেন মাসুদ মিলাদ, শুভংকর কর্মকার, সুমন কুমার দাশউত্তম মণ্ডল

শরীফ জহির

করোনার কঠিন সময়েও তৈরি পোশাক খাত ভালো করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কয়েকটি দেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রেও পোশাকের বিক্রির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বড় ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো পোশাকের ক্রয়াদেশ ধরে রাখছে অথবা বাতিল করে দিচ্ছে। আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে আমাদের কারখানাগুলোতে ভরপুর কাজ ছিল।

এখন সেখানে কিছুটা ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। তারপরও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, নানা কারণে চীন ও ভিয়েতনামের অবস্থা ভালো নয়। মিয়ানমারের সুযোগ শেষ। আফ্রিকার দেশগুলোও ভালো করতে পারছে না। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের সুযোগ আছে। আর পোশাকশিল্পের জন্য সরকার সব সময়ই সহায়তা করছে। রপ্তানি বাড়াতে প্রণোদনা দিচ্ছে। তারপরও কিছু জায়গায় অসহযোগিতার কারণে আমরা পিছিয়ে পড়ছি।

কাস্টমস-বন্ড ও বন্দরে মারাত্মক সমস্যা রয়ে গেছে। রাজস্ব বিভাগের অনেক কর্মকর্তার মনোভাব হচ্ছে, আমদানি-রপ্তানিকারকদের দোষ ধরতে হবে। এতে ভালো ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। ব্যবসার খরচও বেড়ে যায়। অন্যদিকে বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া কাঁচামাল খালাস করতে এখনো দুই সপ্তাহ লেগে যায়। এসব জায়গায় আমাদের অনেক উন্নতির সুযোগ আছে।

তৈরি পোশাক রপ্তানি ১০ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। সে জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও সেবা খাতকে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। সব মিলিয়ে দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। আশা করছি, বাজেটে এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেবেন অর্থমন্ত্রী।

সরকার শতাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল করার উদ্যোগ নিয়েছে। মিরসরাইয়ে আমরাও শিল্প করার জন্য জমি নিয়েছি। তবে সেখানে কারখানা স্থাপন করতে গিয়ে নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছি। পানির ওপর চার্জ ধরা হচ্ছে। তার ওপর আবার সারচার্জও আরোপের কথাও শুনছি। জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলছে কর্তৃপক্ষ। সেটি হলে আমাদের ডিজেল জেনারেটর ব্যবহার করতে হবে। এসব সমস্যা যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করতে হবে, না হলে আমরা পিছিয়ে যাব।

বাংলাদেশের অনেক খাতেই বিনিয়োগ বেশি হয়ে গেছে। তৈরি পোশাকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কারখানা হলেও কিছু কিছু পণ্য উৎপাদনে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ আছে। যেমন—ডেনিমের কারখানা অনেক হলেও কৃত্রিম তন্তু থেকে কাপড় উৎপাদনের কারখানা প্রায় নেই বললেই চলে। তাই পণ্যভিত্তিক বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সরকার তরুণদের বলতে পারে, এখানে সম্ভাবনা আছে, বিনিয়োগ করুন। সেখানে সরকার নীতিসহায়তা দিয়ে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।

ডলার–সংকট কাটাতে যত দ্রুত সম্ভব ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। দেরি হলেই বরং বাংলাদেশ ব্যাংক সমস্যায় পড়ে যাবে। তবে ধীরে ধীরে সমন্বয় করতে হবে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

টিসিবির মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষকে ভর্তুকিমূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখা দরকার। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবাকে ব্যবহার করলে মানুষের দুর্ভোগ কমে আসবে।

শরীফ জহির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অনন্ত গ্রুপ