মানুষের যার যা প্রয়োজন, বাজেটে তা থাকা উচিত

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হবে ৯ জুন, বৃহস্পতিবার। দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা, বাজেট হবে উদ্যোক্তাবান্ধব। এ জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার কথা বলেছেন কেউ কেউ। বাজেট সামনে রেখে বিভিন্ন খাতের ছয়জন তরুণ উদ্যোক্তা তাঁদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। কথা বলেছেন মাসুদ মিলাদ, শুভংকর কর্মকার, সুমন কুমার দাশউত্তম মণ্ডল

মো. বাদশা সাইফুদ্দিন

বাজেট আমার জীবনে কী ভূমিকা রাখে, তা নিয়ে আগে কখনো ভাবিনি। পড়ালেখা শেষে ব্যবসা শুরু করি। একপর্যায়ে নিজের পুঁজিতে শিপিং ব্যবসার উদ্যোগ নিই। ব্যবসাও একেবারে খারাপ হচ্ছিল না।

কিন্তু করোনা এসে ব্যবসার পরিবেশটাই পাল্টে দিল। সেই ধাক্কা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আমাদের ব্যবসা বন্দরকেন্দ্রিক। মোংলা বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে পণ্য স্থানান্তর হয় লাইটার বা ছোট জাহাজে। এসব ছোট জাহাজে করে অভ্যন্তরীণ নৌপথে আমদানি পণ্য নেওয়া হয় দেশের বিভিন্ন নৌঘাটে। ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ সালে আমাদের ভালো ব্যবসা গেছে।

গত দুই বছর করোনার ধাক্কায় ব্যবসাটা ভালো হয়নি। করোনার পরেও সরকারের বেশ কিছু বড় প্রকল্পের মালামাল মোংলা বন্দর দিয়ে এসেছে। তবে আমাদের ব্যবসায়ীদের যে রকম চাওয়া ছিল, আমদানি-রপ্তানিটা সে পরিমাণে হয়নি। জাহাজ ব্যবসায় সময়টা এখনো ভালো যাচ্ছে না। অনেকে লোকসান দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন।
আবার অনেকে ঝরে গেছে। অনেক পুরোনো ব্যবসায়ী গত দুই বছরে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। যারা টিকে আছে, বেশির ভাগই ভর্তুকি দিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে।

মোংলা বন্দরের উন্নয়নকে বাজেটে গুরুত্ব দিলে নৌপরিবহন ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। মোংলা বন্দরে বড় বিনিয়োগ করেছে সরকার। তাতে বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের মতো আমিও মনে করি পদ্মা সেতু চালু হলে এ অঞ্চলের যোগাযোগের কেন্দ্র হবে এই বন্দর।

সারা দেশের আমদানিকারক ও শিল্পোদ্যোক্তারা যাতে মোংলা বন্দর ব্যবহারে আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন, সেই পরিবেশ তৈরি করা দরকার। এই বন্দর দিয়ে রপ্তানি খুব কম। যদিও মোংলা বন্দর দিয়ে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানির বড় সুযোগ রয়েছে। পাটশিল্পের বিকাশে আগামী বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ দরকার।

এক–দেড় বছর পরপর জাহাজ ডকে তুলতে হয়, সে ক্ষেত্রে বড় একটা খরচ হয়। ছোট জাহাজগুলো ডিজেলে চলে। ডিজেলের দাম লিটারে আগের চেয়ে ১৫ টাকা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে জাহাজের কর্মীদের বেতন-ভাতা। মাসে গড়ে তিনটা ট্রিপ হলে নৌ ব্যবসায়ীরা লাভবান হন।

তবে বর্তমানে মাসে গড়ে দুইটার কম ট্রিপ হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলোর গভীরতা কমেছে। এতে জাহাজ চলাচলে ঝুঁকি বাড়ছে। তাই আগামী বাজেটে গুরুত্বপূর্ণ নৌপথগুলো খননে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। তবে একজন তরুণ ব্যবসায়ী হিসেবে আমার প্রত্যাশা, মানুষের যার যা প্রয়োজন, তার বন্দোবস্ত বাজেটে থাকতে হবে।

মো. বাদশা সাইফুদ্দিন

ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাদশা শিপিং লাইনস, খুলনা