সাগরে আরও দুটি নতুন জাহাজ ভাসাল মেঘনা

বন্দর থেকে বন্দরে পণ্য পরিবহনের জন্য নতুন দুটি বড় জাহাজ সাগরে ভাসিয়েছে মেঘনা গ্রুপ। নিবন্ধনের পর জাহাজ দুটিতে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশি পতাকা। মেঘনার নতুন দুটিসহ বাংলাদেশের পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা বেড়ে ৬৩টিতে উন্নীত হয়েছে। এমন সময় মেঘনা গ্রুপ সাগরে নতুন জাহাজ ভাসিয়েছে যখন সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ। আবার পণ্য আমদানির জন্য জাহাজ ভাড়া পেতেও রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে বাংলাদেশের আমদানিকারকদের।

২০১৮ সালে তৈরি নতুন জাহাজ দুটি আজ বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। মেঘনার নতুন জাহাজ দুটির প্রতিটি একসঙ্গে ৬২ হাজার টন পণ্য পরিবহন করতে পারবে। এ নিয়ে মেঘনার বহরে সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮। গ্রুপটি আরও চারটি সমুদ্রগামী বড় জাহাজ তৈরির কার্যাদেশ দিয়েছে। সব মিলিয়ে ছয়টি জাহাজে গ্রুপটি প্রায় ১৬ কোটি মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা (প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৫ টাকা ধরে) বিনিয়োগ করছে।

জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ সাগরে ভাসানোর ফলে পণ্য পরিবহন বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। আবার অন্য দেশের পণ্য পরিবহন করেও বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। পাশাপাশি দেশীয় নাবিকদের কর্মসংস্থানও বাড়বে।

মেঘনা গ্রুপ বছরে ৭০-৮০ লাখ টন ভোগপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করে। চিনি, ভোজ্যতেল, আটা-ময়দা, প্রাণিখাদ্য, সিমেন্ট, কাগজ, জাহাজনির্মাণ, এলপি গ্যাস, পানীয়, মোড়কজাতকরণ, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ মোট ৪৮টি শিল্পকারখানা রয়েছে গ্রুপটির। নিজেদের বহরে থাকা সমুদ্রগামী জাহাজ দিয়ে নিজেদের পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি বিশ্বের নানা দেশের পণ্য পরিবহন করবে গ্রুপটি।

মেঘনা গ্রুপ এগিয়ে এলেও বাংলাদেশে জাহাজের মালিকানা ও পরিচালনায় উদ্যোক্তার সংখ্যা এখনো কম। মেঘনা গ্রুপ ছাড়া বর্তমানে কেএসআরএম গ্রুপ (এসআর শিপিং), আকিজ গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, এমজেএল বাংলাদেশ, কর্ণফুলী লিমিটেড, ওরিয়ন গ্রুপসহ ১১টি শিল্প গ্রুপের জাহাজ রয়েছে। গত তিন বছরে সরকার উদ্যোক্তাদের কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়ায় দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা বেড়েছে। সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাড়লে এই খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলে উদ্যোক্তারা মনে করছেন।

সমুদ্রগামী জাহাজমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ওশান গোয়িং শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আজম জে চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জাহাজের মালিকানা ও পরিচালনায় বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে এই খাতে অনেকে এগিয়ে আসবে। এখন সমুদ্রগামী জাহাজ ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করলে তার ওপর কর রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সমুদ্রগামী জাহাজ আমদানিতে অগ্রিম করও রয়ে গেছে।

উদ্যোক্তারা জানান, বেসরকারি খাতে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ মালিকানা ও পরিচালনা ব্যবসায় প্রথম যুক্ত হয়েছিল অ্যাটলাস শিপিং লাইনস লিমিটেড। এরপর এ তালিকায় যুক্ত হয় সমুদ্রযাত্রা শিপিং, অ্যাকুয়াটিক শিপিং, বেঙ্গল শিপিং, কিউসি, এইচআরসি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান। জাহাজ পরিচালনা ব্যবসায় যারা পথ দেখিয়েছে তাদের মধ্যে কেউই এখন এ ব্যবসায় নেই।

তিনটি সমুদ্রবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে সাড়ে ১০ কোটি টনের বেশি আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন হয় সমুদ্রপথে। এই পণ্যের খুব সামান্য অংশই দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজে পরিবহন হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সমুদ্রপথে পণ্য আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ২ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার বা ২৪ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। তবে জাহাজমালিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ওশান গোয়িং শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’–এর হিসাবে সব মিলিয়ে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন বাবদ ব্যয় ৮ বিলিয়ন ডলারের কম হবে না। এর মাত্র ৩০০ মিলিয়ন ডলার বা পৌনে ৪ শতাংশ দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজের।