সাজগোজ কমিয়েছেন নারীরা, সংকটে প্রসাধনীর ব্যবসা

ফাইল ছবি

করোনা বদলে দিয়েছে সৌন্দর্যচর্চা। বিশ্বজুড়েই কমে গেছে মেকআপের ব্যবহার। ফলে প্রসাধনীর ব্যবসায় দেখা দিয়েছে মন্দা। লন্ডনভিত্তিক জরিপ পরিচালনাকারী বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ক্যান্টারের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে প্রসাধনসামগ্রী ব্যবহার করোনার আগের সময়ের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। ক্যান্টারের জরিপ ধরে বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যান্টার যুক্তরাজ্যের তথা ব্রিটিশ ১০ হাজার নারীর ওপর প্রসাধনী ব্যবহার বিষয়ে জরিপটি করেছে। জরিপে উঠে এসেছে, ২০২০ সালের আগেই মূলত প্রসাধনসামগ্রীর ব্যবহার কমতে শুরু করে। করোনার কারণে বিশ্বের দেশে দেশে লকডাউন বা চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপের কারণে নারীদের সৌন্দর্যচর্চার রুটিনে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে।

চার্লি একজন ব্রিটিশ প্রশিক্ষক। তাঁর প্রতিষ্ঠান রাইনো সেফটি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। করোনার আগে চার্লিকে মেকআপ বা সাজগোজ ছাড়া খুব একটা দেখা যেত না। এখন তিনি প্রসাধনীর ব্যবহার অনেকটা কমিয়ে দিয়েছেন। করোনার পর থেকেই মূলত তিনি প্রসাধনীর ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন। এমনকি কাজে গেলেও আগের মতো সাজগোজ করেন না।

করোনার সময় স্বামী দূরে থাকায় দুই বাচ্চাকে একাই সামলাতে হয়েছে। এর মধ্যে অনেকটা সময় তাকে কাজের জন্য বাইরেও কাটাতে হয়। করোনার কারণে সাজগোজ ছাড়া কাজ করতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারলেন, তাঁর এই বিষয়টিতে কেউ তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। আর তাতেই চার্লি মনে করেন, করোনা মহামারি তাঁকে সাজগোজ ছাড়া স্বাভাবিক লুকে থাকার আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।

রাইনো সেফটিতে চার্লির সঙ্গে কাজ করা তাঁর সহকর্মীরাও চার্লির সঙ্গে এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন। চার্লির প্রতিষ্ঠানের পরিচালক কেট ওয়াল্টারও স্বীকার করেছেন, তিনিও এখন দৈনন্দিন সাজগোজে খুবই কম সময় দেন। শুধু অফিসে যাওয়ার সময় প্রতিদিন কিছুটা ব্লাশার মাসকারা ব্যবহার করেন। মজা করে তিনি বলেন, ‘আমি দেখতে অসুস্থ হতে চাই না।’

সাজগোজের পেছনে বেশি সময় ব্যয় না করার কথা জানিয়ে কেট ওয়াল্টার বলেন, ‘যখন আপনি আপনার রান্নাঘরের টেবিলে বসে থাকবেন, আমি আশা করব না আপনি মেকআপ করে স্যুট পরে থাকবেন।’

ব্রিটিশ নারীদের পাশাপাশি বৈশ্বিকভাবে এ–সংক্রান্ত জরিপ চালিয়েছে ক্যান্টার। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের প্রায় তিন লাখ নারীর ওপর এ জরিপ চালিয়েছে। সেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারীদের সাজগোজের অভ্যাসে বড় পরিবর্তনের বিষয়টি উঠে এসেছে। এ গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৯ সালের পর থেকে প্রসাধনসামগ্রীর বিক্রি ১৯ শতাংশ কমে গেছে।

ক্যান্টারের বিশ্লেষক মায়া জাভিস্লাক বলেন, প্রসাধনী ব্যবসায়ীদের ভুগতে হবে। কারণ, ভোক্তার কাছ থেকে অর্থ পেতে হলে তাদের আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কারণ, জীবনযাত্রার ব্যয় ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে, যার ফলে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কমছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমনিতে করোনার কারণে সাজগোজের অভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। তার সঙ্গে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মানুষ এখন নানাভাবে খরচের লাগাম টানছে। তাতে প্রসাধনীর ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন নারীরা। প্রসাধনসামগ্রী কেনার চেয়ে কিছু মানুষ অন্যান্য পণ্য কেনার দিকে বেশি ধাবিত হচ্ছে। এর ফলে প্রসাধনশিল্প সংকটের মুখে পড়েছে। করোনার পর নারীরা এখন স্বাভাবিক লুকে থাকার ক্ষেত্রে বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন।

তবে প্রসাধনসামগ্রীর ব্যবসা কমলেও স্ক্রিনকেয়ার বা ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত সামগ্রীর ব্যবহার কমেনি। কারণ মহামারিতে ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল জেল ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, অর্থনীতির সংকটের সময়ে সাধারণত লিপস্টিকের বিক্রি বেড়ে যায়। কিন্তু মাস্কের ব্যবহার ও হোম অফিস বা বাসায় বসে কাজ করার ফলে এবার লাল লিপস্টিকের বিক্রি ৪০ শতাংশ কমে গেছে।

চার্লির সহকর্মী জুলি হপউড। করোনায় মাস্ক পরার কারণে ঠোঁটের যত্নের চেয়ে চোখের সাজে গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। তাঁর মতে, সবাই যখন মাস্ক পরে থাকে তখন মুখ ঢাকা থাকে। তাই চোখই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই তিনি চোখে আইশ্যাডো ব্যবহার করেন।