মোটরসাইকেলের সিসিসীমা কি উঠে গেছে

দেশে তৈরি করা যাবে ৫০০ সিসি পর্যন্ত ক্ষমতার মোটরসাইকেল। বিআরটিএ নিবন্ধন দেবে কি না, সেটাই প্রশ্ন।

দেশে উৎপাদনের কারণে মোটরসাইকেলের দাম গত কয়েক বছরে কমেছে। যদিও বৈশ্বিক সংকটের কারণে চলতি বছর দাম কিছুটা বেড়েছে। তাতে চাহিদা কমেছে, সেটি এখনো বলা যাবে না
ছবি: প্রথম আলো

দেশে ১৬৫ সিসির বেশি ইঞ্জিনক্ষমতার মোটরসাইকেল আমদানিতে যে বিধিনিষেধ ছিল, সেটা উঠে গেছে। সরকার ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের জন্য যে আমদানি নীতি করেছে, সেখানে ৫০০ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিনক্ষমতার মোটরসাইকেল দেশে উৎপাদনের জন্য যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ২৫০ সিসির বেশি ক্ষমতার মোটরসাইকেল আমদানিতে করভার বাড়ানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখন দেশের রাস্তায় ১৬৫ সিসির বেশি ইঞ্জিনক্ষমতার মোটরসাইকেল নামানো যাবে। কোম্পানিগুলো বলছে, তারা এখন দেশে বাড়তি ইঞ্জিনক্ষমতার মোটরসাইকেল উৎপাদনের চিন্তাভাবনা করছে।

জানতে চাইলে টিভিএস অটো বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, দেশে এখন ২৫০ সিসির বেশি ক্ষমতার মোটরসাইকেল তৈরি করা যাবে। টিভিএস তৈরি করবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তাভাবনা করছি।’ তিনি আরও বলেন, বেশি সিসির মোটরসাইকেলের নিরাপত্তাবৈশিষ্ট্য বেশি থাকে। চাকা মোটা হয়। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে।

দেশে ২০১৭ সালের আগে ১৫০ সিসির বেশি ক্ষমতার মোটরসাইকেল আমদানি করা যেত না। ২০১৭ সালের আগস্টে এই সিসিসীমা বাড়িয়ে ১৬৫ করা হয়। ২০২০ সালের শেষ দিকে সিসিসীমা পুরোপুরি তুলে নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে। তখন ইফাদ অটোস বাংলাদেশে রয়েল এনফিল্ড ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছিল। পাশাপাশি জাপানি ব্র্যান্ড কাওয়াসাকি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর একটি চিঠি দিয়ে সিসিসীমা ২৫০-এ উন্নীত করার আবেদন করে। তারা জানায়, বাংলাদেশে তারা ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায়।

অবশ্য বিষয়টি তখন দেশে কারখানা করা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতার মুখে পড়েছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এরপর বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষণ করে সুপারিশ করার দায়িত্ব দেয়। ট্যারিফ কমিশন ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দেওয়া সুপারিশে জানায়, মোটরসাইকেলের গতির সঙ্গে ইঞ্জিনক্ষমতার কোনো সম্পর্ক নেই। সিসিসীমা তুলে নেওয়া যেতে পারে।

বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানির স্বার্থে ৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেলের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। রপ্তানি করলে বিআরটিএর অনুমতির দরকার নেই।

অবশ্য আমদানি নীতি আদেশে (২০২১-২০২৪) রপ্তানির শর্ত নেই। এতে বলা হয়েছে, মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান ৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল উৎপাদনে যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আমদানি করতে পারবে।

জানতে চাইলে এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) বিজয় কুমার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, তারা ১৬৫ সিসির বেশি ক্ষমতার মোটরসাইকেল বাজারে আনার চিন্তাভাবনা করছেন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ১৬৫ সিসির বেশি ক্ষমতার মোটরসাইকেল নিবন্ধন দেবে কি না, সেটি খোঁজ নিয়েছেন। জানতে পেরেছেন, বিআরটিএ তাদের প্রক্রিয়া (সিস্টেম) হালনাগাদ করেনি। তিনি বলেন, বিআরটিএ নিবন্ধন দেবে কি না, সেটার ওপর নির্ভর করছে দেশে উৎপাদন ও বাজারজাতের বিষয়টি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভারতে বাজাজের ৪০০ সিসি, টিভিএসের ৩১০ সিসি, হোন্ডার ৩০০ সিসি, ইয়ামাহা ও সুজুকি ২৫০ সিসি, রয়েল এনফিল্ড ৬৫০ সিসি এবং হিরো ২০০ সিসির মোটরসাইকেল উৎপাদন করে। হিরো ৩০০ সিসির একটি মোটরসাইকেল বাজারে ছাড়বে।

এদিকে বিআরটিএ ১৬৫ সিসির বেশি ক্ষমতার মোটরসাইকেল নিবন্ধন দেবে কি না, জানতে চাইলে সংস্থাটির পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমদানি নীতি আদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত। আমরা তো তার বাইরে যেতে পারি না।’