৩০ বছর পর ‘ওয়েট ব্লু’ চামড়া রপ্তানির অনুমতি

প্রথম আলো ফাইল ছবি

পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে মোট এক কোটি বর্গফুট ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা প্রধান আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সম্প্রতি এসব প্রতিষ্ঠানকে চামড়া রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে।

পশুর শরীর থেকে প্রথমে চামড়া ও পরে পশম ছাড়িয়ে প্রক্রিয়াজাত করার পর যে চামড়া পাওয়া যায় তাকেই ওয়েট ব্লু চামড়া বলা হয়। ১৯৯০ সালের আগপর্যন্ত এ ধরনের চামড়া বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হতো। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে সব সময় চীন, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, জাপান ও স্পেনের মতো দেশে ‘ক্রাস্ট’ ও ‘ফিনিশড লেদার’ রপ্তানি হয়ে আসছে। সেখানে অবশ্য ধস নেমেছে কিছুটা।

সিদ্ধান্তটি গতবারই নেওয়া হয়েছিল। তবে তখন তেমন কেউ আগ্রহী ছিলেন না। এবার ৫টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হলেও আরও আবেদন রয়েছে।
তপন কান্তি ঘোষ, বাণিজ্যসচিব

এএসকে ইনভেস্টমেন্ট, কাদের লেদার কমপ্লেক্স, আমিন ট্যানারি লিমিটেড, লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউনিট-২) এবং কালাম ব্রাদারসকে এ দফায় ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। অনুমতির মেয়াদ বহাল থাকবে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিদ্ধান্তটি গতবারই

নেওয়া হয়েছিল। তবে তখন তেমন কেউ আগ্রহী ছিলেন না। এবার ৫টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হলেও আরও আবেদন রয়েছে। তাদের বলা হয়েছে কাগজপত্র ঠিকঠাক করে জমা দিতে। যাচাই-বাছাই করে বাকিদের আবেদনও ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করা হবে।’

অনুমতি দেওয়ার শর্ত হিসেবে বলা হয়, মানসম্মত ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানি করতে হবে, রপ্তানিনীতি ২০১৮-২১ অনুসরণ করতে হবে। জাহাজীকরণ শেষে রপ্তানি সংশ্লিষ্ট সব কাগজ দাখিল করতে হবে। যে দেশে রপ্তানির জন্য অনুমতি দেওয়া হবে সে দেশেই রপ্তানি করতে হবে এবং সরকার প্রয়োজনে যেকোনো সময় ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানি নিষিদ্ধ করতে পারবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহায় পশুর কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে গত বছর বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সুপারিশ করেছিল। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ওই সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন বছর ধরে পবিত্র ঈদুল আজহার পর পশুর চামড়া নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছে সরকার। কারণ, চামড়া প্রক্রিয়াকারী ট্যানারি মালিকেরা চামড়া কেনার জন্য বাজারে টাকা ছাড়েননি পর্যাপ্ত। এ জন্য তাঁরা ব্যাংকঋণ না পাওয়াকে দায়ী করেছিলেন। দাম না পেয়ে এদিকে অনেকে মাটিতে চামড়া পুঁতে ফেলেছিলেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে ঈদুল আজহায় ১ কোটি ১০ লাখের মতো পশু জবাই হয়। এগুলোর মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ গরু-মহিষ। কোভিডের কারণে এবার কোরবানির পরিমাণ কমতে পারে। ঈদুল আজহায় জবাই হওয়া গরুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে বলে চামড়ার মানও খুব ভালো হয়। তাই ট্যানারিগুলো মোট চামড়ার ৫০ শতাংশই সংগ্রহ করে ঈদুল আজহায়।