অবৈধ সিসা ব্যাটারি কারখানা বন্ধের দাবি

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘নগর যাতায়াতব্যবস্থায় বিদ্যুৎ–চালিত তিন চাকার যানের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা। আজ সোমবার সিপিডির ঢাকার ধানমন্ডির কার্যালয়েছবি: সিপিডি

দেশে সিসা ব্যাটারির বাজারের ৭৮ শতাংশ দখল করে আছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এসব ব্যাটারির ৮০ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক বা অবৈধভাবে পুনর্ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে পরিবেশদূষণের পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি হচ্ছে। মাটি হারাচ্ছে উর্বরতা। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের চতুর্থ সিসা-দূষিত দেশে পরিণত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অবৈধ সিসা ব্যাটারি কারখানা চিহ্নিত করে তা বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার ধানমন্ডিতে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত ‘নগর যাতায়াতব্যবস্থায় বিদ্যুৎ–চালিত তিন চাকার যানের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এসব মত উঠে আসে। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় সেমিনারে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার এবং পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কবির আহামদ বক্তব্য দেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির প্রোগ্রাম সহযোগী মো. খালিদ মাহমুদ।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বর্তমানে দেশে প্রায় ৪০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে, যার ৯০ শতাংশই দেশে তৈরি। ২০২৩ সালে ঢাকার মোট ট্রিপের ৩০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে অটোরিকশায়, যেখানে বাসের মাধ্যমে হয় মাত্র ৯ শতাংশ। যথাযথ ও কার্যকর পাবলিক পরিবহনব্যবস্থা না থাকায় মানুষ এসব রিকশার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন।

রিকশাগুলোর নির্মাণমান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মো. খালিদ মাহমুদ। তিনি বলেন, দেশে উৎপাদিত এসব রিকশার চেসিস মানসম্মত নয়, ব্রেকিং সিস্টেম অনেকটা সাইকেলের মতো। প্যাডেলের রিকশায় মোটর সংযোজন করে অটোরিকশায় রূপান্তর করা হচ্ছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এ ছাড়া যত্রতত্র গ্যারেজ গড়ে উঠছে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব দেন তিনি। পাশাপাশি রিকশায় সিসা ব্যাটারি নিষিদ্ধ করে লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহারের নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানান।

ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, রাস্তা নিয়ে যত কাজ হয়েছে, পরিবহন ব্যবস্থাপনায় ততটা কাজ হয়নি। এ ক্ষেত্রে যাত্রীসহ সবাই দায়ী। বৈদ্যুতিক গাড়ির নামেও দেশে রিকশা প্রবেশ করছে। রাস্তায় বিপুলসংখ্যক রিকশার উপস্থিতি প্রশাসনের পাশাপাশি নাগরিকদেরও ব্যর্থতা। কারণ, এ নিয়ে যথেষ্ট প্রতিবাদ হয়নি। সুষ্ঠু বাস ব্যবস্থাপনা চালু হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কবির আহামদ বলেন, ‘এসব রিকশা দিব্যি বাস ও ট্রাকের সামনে দিয়ে চলাচল করছে। দোষ আমাদেরই, যারা এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। পাবলিক পরিবহন না থাকার সুযোগ নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, কৃষিতে এখন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না, কেউ পরিশ্রম করতে চান না। সরকার কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সংঘবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেন।

বিদ্যুৎ–চালিত রিকশাকে ভিলেন বানানো হচ্ছে দাবি করে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যাট ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন জানান, বাইলেন নির্ধারণ করে দিলে তাঁরা মহাসড়কে চলবেন না। নিবন্ধন চালু হলে এমনিতেই রিকশার সংখ্যা কমে আসবে। নতুন নীতিমালা বিআরটিএর অধীন হওয়া উচিত; সিটি করপোরেশনের এই এখতিয়ার নেই।

প্রস্তুতি ছাড়াই আনাড়ি অবস্থায় এসব রিকশা ছড়িয়ে পড়েছে মন্তব্য করে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আরও আগেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন ছিল। ধীরে ধীরে এসব রিকশা সরিয়ে ফেলতে হবে। তবে এখন নজর রাখতে হবে, নতুন করে আর যেন এই রিকশা না বাড়ে। নতুন কারখানা স্থাপনও বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে বিকল্প হিসেবে কার্যকর পাবলিক পরিবহনব্যবস্থা চালু করতে হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আসিফ-উজ-জামান বলেন, এসব রিকশার গতি ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে সীমিত করা প্রয়োজন।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) যুগ্ম সচিব খোন্দকার মো. নাজমুল হুদা শামিম, বিটাকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সায়েদ আবদুল বাকী প্রমুখ।