নিহত-আহত শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ ও গ্রেপ্তারদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি

বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি পোশাকশ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে নিহত ও আহত শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। এই আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেনসহ গ্রেপ্তার হওয়া সব শ্রমিক ও নেতার নিঃশর্ত মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছে তারা।

ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ শুক্রবার আয়োজিত এক বিক্ষোভ–সমাবেশে এসব দাবি জানায় গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটি। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান তাসলিমা আখতারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সহসভাপ্রধান অঞ্জন দাস, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা বিল্লাল শেখ, রুপালি আক্তার, হযরত বিল্লাল ও আঞ্চলিক নেতারা। সমাবেশ শেষে প্রেসক্লাব থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, শ্রমিক ও শ্রমিকনেতারা এখন ভীতির মধ্যে বসবাস করছেন। পোশাকশ্রমিকেরা যখন সম্মানজনক বাঁচার মতো মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণার দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেন, তখন মালিক-সরকার তা বিবেচনা না করে সাড়ে ১২ হাজার টাকা ঘোষণা করে। এর আগে মালিকপক্ষের ১০ হাজার ৪০০ টাকা মজুরি প্রস্তাব শুনে শ্রমিকেরা তা ২৫ হাজার করার দাবিতে রাস্তায় নামেন। সেই আন্দোলন দমনে শ্রমিকদের ওপর অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে গ্রেপ্তার–নির্যাতন চালানো হয় এবং ভীতি সৃষ্টি করা হয়।

শ্রমিকনেতারা বলেন, আন্দোলন–সংগ্রাম ও পোশাকশ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির দাবি তোলার অপরাধে বর্তমানে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেনসহ শতাধিক শ্রমিকনেতা ও পোশাকশ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় সমাবেশ থেকে। বলা হয়, মতপ্রকাশ করা বা সংগঠন-সমাবেশ করা শ্রমিকের অধিকার, এটি কোনো অপরাধমূলক কাজ নয়। স্বাধীন দেশে এভাবে মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়া কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না।

সমাবেশ থেকে অবিলম্বে বাবুল হোসেন, মিজান, রাজু, জুয়েলসহ গ্রেপ্তার সব নেতা ও শ্রমিকের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। বক্তারা বলেন, শ্রমিকনেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। ৩০ অক্টোবরে গাজীপুরের ভোগড়ার শ্রমিক আন্দোলন ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ১১০০–১২০০ শ্রমিকের নামে করা মামলায় বাবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অথচ বাবুল হোসেন ওই দিন গাজীপুরেই ছিলেন না। তিনি আশুলিয়ায় অবস্থান করছিলেন। পরবর্তী সময়ে ১৪ নভেম্বর বাবুল হোসেন নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে গাজীপুর গেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এরপর ডিবি কার্যালয়ে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়।

শ্রমিকনেতারা বলেন, আন্দোলন দমন ও শিল্প এলাকায় ভীতি সৃষ্টির জন্যই এই গ্রেপ্তার। শ্রমিকেরা যাতে ২৫ হাজার টাকা মজুরির দাবি থেকে দূরে সরে আসেন, সে জন্যই দমন–পীড়ন। তাঁরা শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করে অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। নেতারা অভিযোগ করেন, শুধু গ্রেপ্তারই নয়, বিভিন্ন কারখানায় নতুন মজুরি ঘোষণার পর ছাঁটাইও শুরু হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে যখন জীবন চালানো দায়, তখন শ্রমিকদের কাঙ্ক্ষিত নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করা হয়নি। এ অবস্থায় শ্রমিক ছাঁটাই ও নির্যাতন আরও বিপদ ডেকে আনবে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন চারজন, যার মধ্যে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনজন। এযাবৎকালে মজুরি আন্দোলনে নিহত শ্রমিকদের পরিবার কোনো ন্যায়বিচার ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ পায়নি। এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নিহত ব্যক্তিদের জন্য ন্যায়বিচার ও একজীবনের সমান ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে নেতারা শ্রমিকদের জন্য ২৫ হাজার টাকার নিম্নতম মজুরির দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে জানান।