নানা জটিলতা শেষে গত বছরের মে মাসে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ওষুধশিল্প পার্কের জন্য গ্যাসের বিতরণ লাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এরপর সেখানে কারখানা স্থাপন করা একাধিক প্রতিষ্ঠান গ্যাস সরবরাহের জন্য আবেদন করে। কিন্তু আট মাসের বেশি সময় পার হলেও এখনো গ্যাস পায়নি কোম্পানিগুলো।
গ্যাস না থাকায় কারখানা স্থাপন করা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে উৎপাদনকাজ চালাচ্ছে। তাতে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। এপিআই শিল্পপার্কে গ্যাস–সংযোগের কাজ করছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, গ্যাস সরবরাহের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
ধীরগতির সরকারি প্রকল্পের অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে এপিআই শিল্পপার্ক। দেশে ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকার অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট (এপিআই) বা ওষুধশিল্প পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনকে (বিসিক)।
২০০৮ সালে শিল্পপার্কটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। তখন বলা হয়েছিল, দুই বছরে এটির কাজ শেষ হবে। তবে পরবর্তী সময়ে চার দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। এর আগে ২০১৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটির উদ্বোধন করেন। তবে জটিলতা দেখা দেয় গ্যাস–সংযোগ নিয়ে।
বিসিকের কর্মকর্তারা জানান, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল হয়ে ওষুধশিল্প পার্কে গ্যাস সরবরাহের কথা। কিন্তু ওই লাইনে ত্রুটির কারণে তা পুনঃস্থাপন করতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ হয়। সর্বশেষ গত বছরের মে মাসে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়। এরপর একাধিক দফায় তা চিঠির মাধ্যমে বিসিককে জানায় তিতাস।
১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে শিল্পপার্কের কাজ নিয়ে খেলাধুলা চলছে। শিল্পপার্ক প্রস্তুত না হলে ও প্রয়োজনীয় পরিষেবা না পেলে আমরা তো সেখানে বিনিয়োগ করতে পারি না
সর্বশেষ গত ৫ ডিসেম্বর বিসিককে লেখা এক চিঠিতে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানায়, ওষুধশিল্প পার্কে গ্যাস সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ হয়েছে। এপিআই শিল্পপার্ক প্রকল্পে গ্যাস–সংযোগের জন্য গজারিয়া কেন্দ্র (টিবিএস) থেকে এপিআই পার্কের ডিআরএস পর্যন্ত বিতরণ লাইন স্থাপনের কাজ গত বছরের ৮ মে শেষ হয়েছে। এ ছাড়া শিল্পপার্কের প্রতিটি গ্রাহকের জমির সামনে প্রয়োজনীয় বিতরণ লাইন স্থাপনের কাজ ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর শেষ হয়। এই মুহূর্তে এপিআই শিল্পপার্কে গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহের জন্য সব কাজ শেষ হয়েছে। এখন অনুমোদিত গ্রাহকদের গ্যাস–সংযোগ দিতে তিতাসের সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
বিদ্যুৎ দিয়ে কাজ চলছে
বিসিকের কর্মকর্তারা জানান, ২০০ একরের ওই শিল্পপার্কে কারখানা স্থাপনের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মোট ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত তিনটি প্রতিষ্ঠান সেখানে কারখানা স্থাপন করেছে। এগুলো হচ্ছে হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, একমি ল্যাবলেটরিজ ও ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস। আর ইউনিমেইড-ইউনিহেলথ ফাইন কেমিক্যালস সেখানে কারখানা স্থাপনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এর বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠান এখনো সেখানে কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করেনি।
কারখানা স্থাপন করা তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হেলথকেয়ার ও একমিকে গ্যাস–সংযোগের জন্য প্রায় চার মাস আগে অনাপত্তিপত্র দেয় বিসিক। পরে প্রতিষ্ঠান দুটি তিতাসের সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগে গ্যাসের জন্য আবেদন করে। তবে এখনো তারা গ্যাস পায়নি। আর ইবনে সিনা এখনো গ্যাস–সংযোগের জন্য আবেদন করেনি। এ নিয়ে হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হালিমুজ্জামান বলেন, ‘আমরা আবেদন করেছি। এখন তিতাস থেকে প্রয়োজনীয় যাচাই–বাছাই শেষে গ্যাস দেওয়ার কথা।’
∎ শিল্পপার্কটিতে প্লট রয়েছে ৪২টি
∎ জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে
∎ এ পর্যন্ত কারখানা স্থাপন করেছে তিনটি প্রতিষ্ঠান
∎ গ্যাসের সংযোগ লাইন স্থাপিত হলেও গ্যাস যায়নি
ওষুধ শিল্পপার্কে কারখানা স্থাপন করা প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, তিতাস থেকে গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় তারা বর্তমানে বিদ্যুৎ দিয়ে কাজ চালাচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকলে তখন নিজস্ব খরচে ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে উৎপাদনপ্রক্রিয়া চালাতে হচ্ছে তাদের। এতে উৎপাদন খরচ বেশি লাগছে। এ ছাড়া ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কিছু কাজের জন্য গ্যাস আবশ্যক বলে জানান এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
তিতাস গ্যাসের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সেলিম মিঞা বলেন, ‘আমাদের কাছে দুটি প্রতিষ্ঠান গ্যাসের জন্য আবেদন করেছে। তাদের কাগজপত্র যাচাই–বাছাই চলছে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলে তাদের গ্যাস সরবরাহ করা হবে।’
ওষুধ শিল্পপার্কে জমি পাওয়া ২৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৩টি প্রতিষ্ঠান কারখানা স্থাপন করেছে। বাকি প্রতিষ্ঠান কবে কারখানা স্থাপন শুরু করবে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিকের শিল্পনগরী ও সমন্বয় শাখার উপমহাব্যবস্থাপক জি এম রব্বানী তালুকদার বলেন, এত দিন গ্যাস না থাকায় অনেকে কারখানা স্থাপনে সময় নিচ্ছিলেন। এখন দ্রুততম সময়ে সেখানে গ্যাস চলে যাবে। এ জন্য বিসিকের পক্ষ থেকে সবাইকে কারখানা স্থাপনের জন্য তাগাদা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান বলেন, ‘১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে শিল্পপার্কের কাজ নিয়ে খেলাধুলা চলছে। শিল্পপার্ক প্রস্তুত না হলে ও প্রয়োজনীয় পরিষেবা না পেলে আমরা তো সেখানে বিনিয়োগ করতে পারি না। এখন গ্যাসের লাইন স্থাপন শেষ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুততম সময়ে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে বলে আশা করছি।’