শোভন কর্মপরিবেশের ঘাটতি রয়েছে পোশাক কারখানায়: সিপিডি

‘পোশাক খাতের সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধি ও শোভন কর্মপরিবেশ’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা। গতকাল সকালে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে
প্রথম আলো

করোনা–পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ গত সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পোশাক রপ্তানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ছিল। অত্যধিক ক্রয়াদেশের কারণে ওই সময়ে ৪৫ শতাংশ কারখানা শ্রমিকদের রাতের পালায় (শিফট) কাজ করায়। শুক্রবার ছুটির দিনেও কাজ করিয়েছে ৪৫ শতাংশ কারখানা। তাতে শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা বেড়ে ১০ দশমিক ৪৬ ঘণ্টায় দাঁড়ায়। অতিরিক্ত কাজের কারণে শ্রমিকদের গড় উপার্জন গত মার্চে বেড়ে হয় ১৫ হাজার ৬৩৩ টাকা (অতিরিক্ত কাজের মজুরিসহ)। গত ডিসেম্বরে যা ছিল ১৩ হাজার ৩২৬ টাকা।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান এইডের যৌথ জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। জাতিসংঘের শ্রম-কর্মপরিবেশসংক্রান্ত নীতিকাঠামোর (এনজিপিএস) আলোকে সাম্প্রতিক পোশাক রপ্তানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির সময়ে খাতটিতে শোভন কর্মপরিবেশের কতটুকু উন্নতি হয়েছে, সে বিষয়ে ধারণা পাওয়ার জন্য জরিপটি করা হয়েছে। এটি জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্বশীল জরিপ নয়। ৫১টি পোশাক কারখানার ১০৩ জন শ্রমিক এ জরিপে অংশ নেন। রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার ইনে গতকাল আয়োজিত এক সংলাপে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এতে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, শ্রমিকেরা চাইলে প্রতিটি কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন হওয়া উচিত। তবে ট্রেড ইউনিয়নের কাজ কী, সেটি যেন শ্রমিকনেতারা বোঝেন। তিনি বলেন, শ্রমিকদের স্বার্থ যেমন দেখতে হবে, তেমনি শিল্পটিকেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

সিপিডির চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতি রেহমান সোবহান অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেন, চীন থেকে সরে আসা ক্রয়াদেশ নিতে পোশাকশিল্প মালিকদের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর পণ্য রপ্তানিতে অগ্রাধিকারমূলক বাজার–সুবিধা জিএসপি প্লাসের জন্য যোগ্য হতে কমপ্লায়েন্স মানার ওপর জোর দেন।

অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য তুলে ধরে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, উচ্চ রপ্তানি প্রবৃদ্ধির সময়ে (গত সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ) ১৮ শতাংশ শ্রমিক জোর করে কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। এ সময় শ্রমিক হয়রানির ঘটনাও বেড়েছে। প্রতিটি কারখানায় গড়ে তিনটি হয়রানির ঘটনা ঘটেছে, যা তার আগের বছরের একই সময়ে ছিল দুটি। তবে উচ্চ প্রবৃদ্ধির এই সময়ে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। অন্যদিকে কারখানা পরিদর্শনে নিয়োজিত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ–দুর্নীতির অভিযোগ করেন জরিপে অংশ নেওয়া ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ কারখানা।

ট্রেড ইউনিয়নের বিষয়ে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, শ্রমিকেরা উদ্যোগী হয়ে এ ধরনের কার্যক্রমে যেতে চান না। আর বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, শ্রমিকদের জীবনধারণের জন্য উপযোগী মজুরি নিশ্চিত করতে শ্রমিকনেতাদের সহযোগিতা দরকার।