২০২৫ সালের মধ্যে পণ্য রপ্তানি ১০০ কোটি ডলারে নিতে চায় প্রাণ-আরএফএল
১৯৯৭ সালে ফ্রান্সে আনারস পাঠানোর মধ্য দিয়ে রপ্তানির জগতে যাত্রা শুরু প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের। বিদায়ী অর্থবছরে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এই শিল্পগোষ্ঠী ৫৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, যা দেশীয় মুদ্রায় ৫ হাজার ২৪ কোটি টাকার সমান। তিন বছরের মধ্যে তারা পণ্য রপ্তানিতে ১০০ কোটি ডলারের মাইলফলকে পৌঁছতে চায়। আর ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের লক্ষ্য ২০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি।
রপ্তানিতে ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান এই শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী। রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আজ রোববার সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
হোটেলের যে মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়, তার তিন পাশে স্থাপিত অস্থায়ী তাকে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য থরে থরে সাজানো ছিল। তার মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী, প্লাস্টিক পণ্য, সাইকেল, বাথরুম ফিটিংস, স্টেশনারি পণ্য, তৈরি পোশাক, রেফ্রিজারেটর, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, আসবাব, কেব্লস, বৈদ্যুতিক বাতি, সুইচ, ব্রিফকেস, প্লাস্টিকের খেলনা ইত্যাদি।
রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের জোগান যদি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। খাদ্যপণ্যের বিক্রি ভালো, তৈরি পোশাকে ভালো করলেও আমরা সেখানে খুবই ক্ষুদ্র। এই খাতে আমরা বড় হতেও চাই না। অপ্রচলিত পণ্যেই আমাদের নজর বেশি। আরএফএলের পণ্যেও আমরা বেশ সাড়া পাচ্ছি। সম্প্রতি আমরা ফ্যান ও টায়ার রপ্তানি শুরু করেছি। বর্তমানে আমরা দিনে এক হাজার সাইকেল রপ্তানি করছি। এক বছরের মধ্যে আমরা সাইকেল উৎপাদনের সক্ষমতা দিনে চার হাজারে উন্নীত করতে চাই। সেই সাইকেল বিশ্বখ্যাত খুচরা বিক্রেতা ব্র্যান্ড ওয়ালমার্টেও বিক্রি হবে।’
১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রাণ-আরএফএল গ্রুপে বর্তমানে কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার। ১৪৫ দেশে তাদের প্রায় এক হাজার ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। তাদের পণ্যের বড় বাজার ভারত, নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও আফ্রিকা।
আহসান খান চৌধুরী জানান, বিশ্বের ১৫০ কোটি মানুষ বছরের কোনো না কোনো সময় প্রাণ-আরএফএলের পণ্য ব্যবহার করে। বাংলাদেশের বাইরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের হয়ে প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি কাজ করেন।
রপ্তানি ও দেশে বিক্রি হওয়া প্রাণের খাদ্যপণ্যের মান একই কি না, জানতে চাইলে আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘মান একই। তবে বাংলাদেশি কোম্পানি হিসেবে আমরা এখনো শিখছি। ভীষণভাবে চেষ্টা করছি। খাদ্যপণ্যের কোম্পানি হিসেবে ভুল হয়। সেখানে প্রতিনিয়ত উন্নয়নের সুযোগ থাকে। তবে আমরা প্রাণের প্রত্যেক কর্মী আন্তর্জাতিক মানের খাদ্যপণ্য উৎপাদনে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি।’
ডলারসংকটে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সঙ্গে আমরা সম্পূর্ণভাবে একমত। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মতো দুরবস্থা এড়াতে আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। তেল-বিদ্যুৎ বাঁচাতে হবে। জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমাতে না পারলে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়বে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে কৃচ্ছ্রসাধন করে হলেও আমাদের শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’