সাশ্রয়ী দামে ইউরোপীয় মানের লিফট দিচ্ছি

২০১৯ সাল থেকে দেশে লিফট তৈরি করছে ওয়ালটন। দেশে লিফটের বাজার ও এই খাতে বিনিয়োগ নিয়ে কথা বলেছেন ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম মুর্শেদ। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুজয় মহাজন

গোলাম মুর্শেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ইলেকট্রনিকস পণ্য থেকে কেন লিফটের বাজারে যুক্ত হলেন আপনারা?

গোলাম মুর্শেদ: ওয়ালটন ইলেকট্রনিকসের ব্যবসায়ে যুক্ত হয়েছে সম্পূর্ণ নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে। আমাদের উদ্যোক্তারা দেখলেন যে দেশে ইলেকট্রনিকস পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সেই চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে আমদানি পণ্য দিয়ে। তাতে দেশ থেকে বিপুল অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। তখনই তাঁরা এই বাজারে নিজেদের যুক্ত করেন। ধীরে ধীরে একটির পর একটি পণ্য বাজারে আনতে থাকেন। দায়িত্ববোধের ধারাবাহিকতাই আমরা লিফটের ব্যবসায়ে যুক্ত হয়েছি। আমরা দেখলাম, এ দেশে লিফটের বড় একটি বাজার রয়েছে। চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। অথচ সেই চাহিদা পূরণ করছে আমদানি করা বিদেশি লিফট। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও নিজেরা লিফট বানাতে পারব না, এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। সেই তাড়না থেকে লিফট তৈরির কারখানায় বিনিয়োগ করেছি। আমরা মনে করেছি, এই বাজারে আমরা যুক্ত হলে দেশের মানুষ যেমন সাশ্রয়ী দামে লিফট পাবেন, তেমনি বিক্রয়োত্তর সেবা ও যেকোনো ধরনের সমস্যার দ্রুত সমাধান পাবেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: কবে থেকে কীভাবে এই ব্যবসা শুরু করলেন। কোন ধরনের লিফট তৈরি করছেন আপনারা?

গোলাম মুর্শেদ: ২০১৯ সালে আমরা বাণিজ্যিকভাবে লিফট উৎপাদন শুরু করি। তার আগে আমাদের তৈরি করা লিফটের মান পরীক্ষার জন্য আমরা পরীক্ষামূলকভাবে ১৫–২০টি লিফট তৈরি করে তা নিজেদের কারখানায় ব্যবহার করি। দীর্ঘ সময় এসব লিফট ব্যবহারের পর বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাই। যাত্রী পরিবহন বা প্যাসেঞ্জার লিফট দিয়েই যাত্রা শুরু করি। আমাদের দেশে পুরোনো অনেক ভবন আছে, যেগুলো তৈরির সময় লিফটের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ওই সব ভবনে কাস্টমাইজড লিফটের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। শুরু থেকেই আমরা দেখলাম কাস্টমাইজড লিফটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা সেই বাজারটিতে নজর দিই। কারণ, বিদেশ থেকে আমদানি করা লিফটে কাস্টমাইজড সুবিধা নেই। ফলে শুরুতেই আমরা ভালো সাড়া পেলাম।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: লিফটের ক্ষেত্রে মান একটি বড় বিষয়। আপনাদের লিফটের মান কেমন?

গোলাম মুর্শেদ: আমরা দেখেছি আমাদের দেশের লিফটের বাজারের বড় একটি অংশই চীনের দখলে। তাই আমরা শুরুতে চীনের চেয়ে উন্নত মানের লিফট তৈরিতে মনোনিবেশ করি। এখন আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আমাদের লিফট চীনা লিফটের চেয়ে মানের দিক থেকে বেশ উন্নত। আমাদের লিফটের মান অনেকটাই ইউরোপীয় লিফটের সমপর্যায়ের। কিন্তু ইউরোপের লিফটের চেয়ে দাম কম। সেই হিসাবে বলতে পারি, সাশ্রয়ী দামে আমরা ইউরোপের মানের লিফট দিচ্ছি। এ ছাড়া গ্রাহকেরা পাচ্ছেন সার্বক্ষণিক বিক্রয়োত্তর সেবা। ১২ বছর পর্যন্ত আমরা বিক্রয়োত্তর সেবা দিয়ে থাকি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনারা মাসে কী পরিমাণ লিফট তৈরি করছেন এখন? এ খাতে দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে কী ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছেন?

গোলাম মুর্শেদ: বর্তমানে আমরা মাসে ১০০টির মতো লিফট তৈরি করছি। আমাদের পরিকল্পনা কয়েক বছরের মধ্যে এই সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০০ থেকে ৪০০টিতে উন্নীত করা। একসময় দেশে ১ শতাংশ শুল্ক দিয়ে লিফট আমদানির সুযোগ ছিল। সেই শুল্ক বাড়িয়ে এখন ৫ শতাংশ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই শুল্ক সুবিধা পাওয়ার পরও দেশে লিফট তৈরির তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এখন দেশীয় কোম্পানি এই বাজারে যুক্ত হয়েছে। তাই আমরা মনে করি, ধীরে ধীরে লিফট আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়ে দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া উচিত, সহযোগিতা করা দরকার। তাতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। দেশীয় শিল্প খাত যাতে আরও বড় হতে পারে, সে জন্য সবার সহযোগিতা দরকার।

আরও পড়ুন