রপ্তানি হওয়া পোশাকের লেবেল এই প্রথম বাংলা বর্ণমালা

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের লেবেলে বাংলা বর্ণমালা যুক্ত করেছে উইজডম অ্যাটায়ার্স লিমিটেড।

আজ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি বা বিজিএমইএর সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর পক্ষে থেকে উইজডম অ্যাটায়ার্সের কর্ণধার ও সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে অভিনন্দন জানানো হয়।

পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিজিএমইএর সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান বক্তব্য দেন।

বিজিএমইএর আশাবাদ, আগামী ১ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে বাংলাদেশে উৎপাদিত সব পোশাক পণ্যের লেবেলে বাংলা বর্ণমালায় ‘বাংলাদেশে তৈরি’ লেখাটি মুদ্রিত থাকবে। এর মাধ্যমে সারা বিশ্ব বাংলাদেশের গর্বের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশকে জানতে পারবে।

সব রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও সেই সঙ্গে স্থানীয় বাজারের জন্য পোশাক প্রস্তুতকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতি বিজিএমইএর উদাত্ত আহ্বান, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় উভয় বাজারের জন্য উৎপাদিত পোশাকের লেবেলে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা বর্ণমালায় ‘বাংলাদেশে তৈরি’ যুক্ত করা হোক।

রপ্তানির পোশাকে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে বৈশ্বিক ক্রেতাদের ঐকান্তিক সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করেন নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে বাংলা ভাষাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে বিজিএমইএর বর্তমান পর্ষদ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

উদ্যোগটি ছিল, বাংলা ভাষায় বাংলাদেশ ও পোশাক শিল্পের গর্বের বার্তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি থাকা সত্ত্বেও বৈশ্বিক মূল্যায়নে বাংলাদেশ এখনো জাতির ব্র্যান্ডিংয়ে কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি। তাই বিজিএমইএ পোশাক শিল্পকে ব্র্যান্ডিং করার পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার ক্ষেত্রেও ধারাবাহিকভাবে উদ্যোগ নিচ্ছে, যার নজির হিসেবে গত বছরের নভেম্বরে বিজিএমইএর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হওয়া ‘মেইড ইন বাংলাদেশ উইক’ শীর্ষক বড় অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে বিজিএমইএ।

সংবাদ সম্মেলনে পোশাক খাতের বর্তমান চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোচনা করা হয়। ফারুক হাসান বলেন, দেশের প্রধান রপ্তানি বাজারগুলোয়, বিশেষ করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব উন্নত দেশের ভোক্তারা ভোগ্যপণ্যের ব্যয় কমিয়ে দিয়েছেন, ফলে কমে আসছে পোশাকের চাহিদা। তাই পোশাকের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে ছাড়কৃত পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য নীতিতে যে পরিবর্তনগুলো আসছে, সে বিষয়গুলোতে দেশের যথেষ্ট প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে, তা না হলে বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়তে হবে। বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ মানবাধিকার ও ডিউ ডিলিজেন্স প্রটোকল গ্রহণ করছে, যেগুলো প্রতিপালন করতে আমাদের সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।

এলডিসি উত্তরণ–পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজিএমইএ সরকারের সঙ্গে একান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন ফারুক হাসান। তিনি বলেন, দেশের ব্র্যান্ডিংয়ের পাশাপাশি অ্যাপারেল ডিপ্লোমেসি নিয়ে কাজ হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পথটি মসৃণ করতে উত্তরণকালের মেয়াদ বাড়িয়ে ছয় বছর করার জন্য তিনি সরকারের মাধ্যমে সুবিধা দেওয়া দেশগুলোকে অনুরোধ করেন।