জানুয়ারিতে ৪৪৪ কোটি ডলারের রপ্তানি

সার্বিকভাবে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে টপকে আবার দ্বিতীয় শীর্ষস্থানে চলে এসেছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য।

চট্টগ্রাম বন্দরফাইল ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। টানা চার মাস ধরে ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যদিও রপ্তানি বৃদ্ধির গতি ডিসেম্বরের চেয়ে জানুয়ারিতে কিছুটা কমেছে। 

সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে ৪৪৪ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। যদিও গত ডিসেম্বরে ৪৬৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ১৭ শতাংশে। তার আগে অক্টোবর ও নভেম্বরে যথাক্রমে ৪১৩ ও ৪১১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল সোমবার পণ্য রপ্তানির এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাস জুলাই-জানুয়ারিতে মোট ২ হাজার ৮৯৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি এর আগের ২০২৩–২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি। 

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত জানুয়ারিতে তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়াবিহীন জুতা, হিমায়িত খাদ্য ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বাড়লেও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্লাস্টিক পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি কমেছে। তবে পোশাক রপ্তানিতে ৫ দশমিক ৫৭ প্রবৃদ্ধি হওয়ার ফলে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি কাছাকাছি রয়েছে। কারণ, রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক খাত থেকেই আসে। 

বাংলাদেশি পণ্যের, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় কানাডা, মেক্সিকো ও চীন থেকে পণ্য আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপে পৃথক তিনটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা ৪ ফেব্রুয়ারি (আজ) থেকে কার্যকর হবে। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চীনা পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করায় দেশটি থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ সরবে। সে ক্ষেত্রে সস্তা ও মাঝারি দামের পণ্যের ক্রয়াদেশ পাওয়ার সুযোগ বাড়বে বাংলাদেশি কারখানাগুলোর।
মোহাম্মদ হাতেম, সভাপতি, বিকেএমইএ 

যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে নতুন করে শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছেন দেশের রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদেরা। তাঁরা বলছেন, তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য, হোম টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন পণ্যের বাড়তি ক্রয়াদেশ বা ফরমাশ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। বিনিয়োগকারীরা চীন থেকে কারখানা সরিয়ে এখন অন্য দেশে নিতে আগ্রহী হতে পারেন। সেই বিনিয়োগ বাংলাদেশও নিতে পারে। 

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ২ হাজার ৩৫৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। জানুয়ারিতে ৩৬৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। যদিও ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৭ শতাংশের বেশি। 

এদিকে রপ্তানিতে আবার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে টপকে দ্বিতীয় শীর্ষস্থানে চলে এসেছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৬৭ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশ বেশি। জানুয়ারিতে ৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। 

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাস জুলাই-জানুয়ারিতে ৬৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি। জানুয়ারিতে ৯ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় পৌনে ৫ শতাংশ কম। 

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, আগামী কয়েক মাস তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি থাকবে। কারণ, কারখানাগুলোয় বর্তমানে ভালো ক্রয়াদেশ আছে। যদিও পোশাকের দাম কম। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চীনা পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করায় দেশটি থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ সরবে। সে ক্ষেত্রে সস্তা ও মাঝারি দামের পণ্যের ক্রয়াদেশ পাওয়ার সুযোগ বাড়বে বাংলাদেশি কারখানাগুলোর। তবে এ জন্য সরকারকে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের সমাধানের পাশাপাশি ব্যাংকিং সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) ও প্রি–শিপমেন্ট ক্রেডিট স্কিম অব্যাহত রাখাও জরুরি।