পাঁচ মাস পর পণ্য রপ্তানি ৪০০ কোটি ডলারের নিচে

এপ্রিলে রপ্তানি কমে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা শ্লথ হয়েছে।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই গত নভেম্বর থেকে টানা পাঁচ মাস বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ছিল ৪০০ কোটি ডলারের বেশি। তার মধ্যে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি ছিল অন্তত ৫০০ কোটি ডলার। তবে গত মাসে অর্থাৎ এপ্রিলে পণ্য রপ্তানি কমে ৩৯২ কোটি ডলার হয়েছে। এপ্রিলের এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৯৯ শতাংশ কম।

এপ্রিলে রপ্তানি কমে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা শ্লথ হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ৯ মাস (জুলাই-মার্চ) শেষে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গত মাস শেষে প্রবৃদ্ধির কিছুটা কমে ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছর শেষ হবে জুনে। গত অর্থবছরের রপ্তানির মাইলফলকের চেয়ে চলতি অর্থবছরে রপ্তানি এখনো ৮০৯ কোটি ডলার কম।

পণ্য রপ্তানির হালনাগাদ পরিসংখ্যান গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। চলতি অর্থবছরের জন্য ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলার। 

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৪ হাজার ৭৪৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি এ সময়ের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ কম। অবশ্য এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। 

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তৈরি পোশাক ছাড়াও কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, চামড়াবিহীন জুতা ও প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি এখনো ইতিবাচক ধারায় ফেরেনি। মূলত আগের মাসগুলোর তুলনায় তৈরি পোশাক রপ্তানি কম হওয়ার কারণেই এপ্রিলে সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি কমে গেছে। 

বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকের রপ্তানির প্রবৃদ্ধি গত ১০ মাসে ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ৪৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। গত অর্থবছরের এ সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি ছিল ৩ হাজার ৮৫৮ কোটি ডলারের। এপ্রিল পর্যন্ত মোট পণ্য রপ্তানির ৮৫ শতাংশই ছিল তৈরি পোশাক।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত মাসে ৩২৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত নভেম্বর থেকে প্রতি মাসেই ৪০০ কোটি ডলারের বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। গত বছরের এপ্রিলে তৈরি পোশাকের রপ্তানি ছিল ৩৩৩ কোটি ডলার।

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির কারণে গত মাসে অধিকাংশ কারখানা কমবেশি ১০ দিন বন্ধ ছিল। সে কারণে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কম হয়েছে। 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীন ও ভিয়েতনাম ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলে বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়ে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে বিদেশি ক্রেতারা আগের চেয়ে কম লিড টাইমে পণ্য চাইছেন। কিন্তু আমরা গ্যাস–সংকটের কারণে এত কম সময়ে পণ্য দিতে পারছি না।’

এদিকে পণ্য রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এখনো নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৮৭ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৩২ শতাংশ কম। অবশ্য তৃতীয় শীর্ষ খাত কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত এ খাতের রপ্তানি ৭৭ কোটি ডলার। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ। 

একইভাবে চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি বেড়েছে। গত এপ্রিল শেষে চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি হয়েছে ৪২ কোটি ৫১ লাখ ডলার। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি।