রপ্তানি খাত
নতুন দুই পণ্য রপ্তানিতে নামল বাংলাদেশ
প্লাস্টিকশিল্পের কাঁচামাল পিভিসি ও পেট রেজিন দেশে শতভাগ আমদানিনির্ভর পণ্য ছিল। এবার প্রথম রপ্তানি শুরু হলো।
দেশে রপ্তানির তালিকায় নতুন দুটি পণ্য যোগ হয়েছে। দুটিই প্লাস্টিকশিল্পের কাঁচামাল—পেট রেজিন ও পিভিসি (পলিভিনাইল ক্লোরাইড)। বাংলাদেশে এ দুটি পণ্য এত দিন ছিল শতভাগ আমদানিনির্ভর।
দেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় এত দিন ছিল ২৬৭টি পণ্য। এর বেশির ভাগই পোশাক খাতের। এ দুটি পণ্য যোগ হওয়ায় সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৬৯।
রেজিন ও পিভিসির বৈশ্বিক বাজারও বেশ বড়। বাজার গবেষণাকারী বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে পিভিসি ও পেট রেজিন রপ্তানির বাজার ছিল প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলারের। প্রতিবছর এ দুই পণ্যের রপ্তানি বাজার ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে।
দেশ থেকে ইতিমধ্যে রেজিন ও পিভিসি রপ্তানি শুরু করেছে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেঘনা পিভিসি লিমিটেড। বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, শুধু এমজিআই নয়, সরকারের সহযোগিতা পেলে দেশের উদ্যোক্তারা এ ধরনের বিশেষায়িত পণ্য উৎপাদনে পদক্ষেপ নিতে পারেন।
পিভিসি
নারায়ণগঞ্জে মেঘনার নিজস্ব কারখানায় গত মাসে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয় পলিভিনাইল ক্লোরাইড বা পিভিসির। পরীক্ষামূলক উৎপাদনের দুই সপ্তাহের মধ্যে সাফল্য আসে। গত মঙ্গলবার ৩৭৫ টনের একটি চালান ভারতে রপ্তানির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে রপ্তানি আয় হবে প্রায় সাড়ে তিন লাখ ডলার। আগামী সপ্তাহে আরও সাড়ে ছয় লাখ ডলারের ৭২৫ টন পিভিসি রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে। প্রতিষ্ঠানটির কারখানার উৎপাদনক্ষমতা দেড় লাখ টন।
পিভিসি দিয়ে প্লাস্টিকের পাইপ, দরজা, গ্লাভস, খেলনা, জুতা, কৃত্রিম চামড়া, ঘরের মেঝের উপকরণ, গাড়ির নানা উপকরণ ও গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের নানা পণ্য তৈরি হয়। গত অর্থবছরে ২৮০টি প্রতিষ্ঠান ৩ লাখ ২৬ হাজার টন পিভিসি আমদানি করেছে।
২০২০ সালে পিভিসির বৈশ্বিক রপ্তানি বাজার ছিল প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের। এই পণ্যের বড় আমদানিকারক দেশ ভারত। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ সালে (এপ্রিল-মার্চ) দেশটি ২৫৪ কোটি ডলারের ১৬ লাখ ৭১ হাজার টন পিভিসি আমদানি করেছে।
ভারত ছাড়াও চীন, তুরস্ক, ইতালি, জার্মানি, কানাডা ও ভিয়েতনামে পিভিসির চাহিদা রয়েছে।
পেট রেজিন
দেশীয় প্রতিষ্ঠান মেঘনা পিভিসির প্রথম উৎপাদিত পণ্য পেট রেজিন। প্রায় চার মাস আগে পণ্যটি উৎপাদনের পরই রপ্তানি শুরু হয়। এ পর্যন্ত ১ কোটি ৭৬ লাখ ডলার বা ১৫৬ কোটি টাকা মূল্যের ১৩ হাজার ১৯৩ টন পেট রেজিন রপ্তানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। রপ্তানির গন্তব্য ছিল ভারত, ইতালি ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ ধরনের পেট রেজিন উৎপাদন করছে। মূলত বিশুদ্ধ পানির বোতল ও পানীয়ের বোতল, খাদ্যপণ্য প্যাকেজিংয়ের পণ্য তৈরিতে এসব রেজিন ব্যবহৃত হয়। গত অর্থবছরে দেশের ১৩৯টি প্রতিষ্ঠান এ পাঁচ ধরনের পেট রেজিন আমদানি করে ১ লাখ ৩২ হাজার টন।
বাজার গবেষণাকারী সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে এ পাঁচ ধরনের রেজিনের বৈশ্বিক রপ্তানির বাজার ছিল ৭৭০ কোটি ডলার মূল্যের। এর বড় আমদানিকারক যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি ও ভারত। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে (এপ্রিল-মার্চ) ৫৭ কোটি ডলারের ৩ লাখ ৯৭ হাজার টন পেট রেজিন আমদানি করেছে দেশটি।
বিশ্বের রপ্তানির বাজারে শীর্ষ ১০-এ রয়েছে প্লাস্টিকশিল্পের মৌলিক কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামাল ও প্রস্তুত পণ্য। ২০২০ সালে এর বাজার ছিল ৬০২ বিলিয়ন ডলারের।