ঈদের আগে মার্চের পুরো বেতন পাননি সব শ্রমিক

তৈরি পোশাকশিল্প খাতছবি: প্রথম আলো

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকেরা বোনাস পেলেও মার্চ মাসের পুরো বেতন পাননি অনেকে। এমন প্রেক্ষাপটে ঈদ ও নববর্ষের ছুটি শেষে পোশাক কারখানা খুলতে শুরু করেছে।

শ্রমিকনেতারা অভিযোগ করে বলেন, কম হোক, বেশি হোক—কারখানাগুলো বোনাস দিয়েছে। তবে ছোট ও মাঝারি অনেক কারখানা মার্চের পুরো বেতন দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও চাকরি হারানোর ভয়ে আন্দোলনের ঘটনা ঘটেনি। অন্যদিকে মালিকপক্ষের নেতারা বলছেন, যেসব কারখানা মার্চের পুরো বেতন দেয়নি, তারা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অসংগতির কথা শ্রমিকদের জানিয়েছে। ছুটির পর শ্রমিকদের বকেয়া বেতন দিয়ে দেবে কারখানাগুলো।

ঈদের আগে কত শতাংশ পোশাক কারখানা বোনাস ও বেতন দিয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে শিল্প পুলিশ সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেটের তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পের সাড়ে ৯ হাজার কারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধের বিষয়টি তদারক করেছে। সর্বশেষ ৯ এপ্রিল দুপুর ১২টা পর্যন্ত বেতন-ভাতা পরিশোধের তথ্য গণমাধ্যমকে দিয়েছিল।

শিল্প পুলিশের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তাদের তদারকির আওতায় থাকা বিজিএমইএর ১ হাজার ৫৬১ কারখানার মধ্যে ২৭২টি বা ১৭ দশমিক ৪২ শতাংশ কারখানার বেতন বকেয়া ছিল। আর ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ কারখানার ঈদ বোনাস বাকি ছিল। অন্যদিকে বিকেএমইএর ৬২৬ কারখানার বোনাস ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ বাকি থাকলেও বেতন বাকি ছিল ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ অথবা ৮৪টি কারখানায়।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি এস এম মান্নান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের জানামতে, অনেক কারখানায় বেতনের একটি অংশ বকেয়া ছিল। এটা স্বাভাবিক বিষয়। অতীতেও ঈদের আগে কেউ কেউ বেতনের একটি অংশ দিত, ঈদের ছুটির পর বাকিটা পরিশোধ করত।’

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আর্থিক সংকটের কারণে আমাদের সংগঠনের অল্প কিছু সদস্য মার্চের পুরো বেতন দিতে পারেনি। তাদের কেউ কেউ বেতনের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ দিয়েছে। বেতনের একটা অংশও দেয় নাই, এমন কোনো কারখানা নেই।’ তিনি জানান, আজ (গতকাল) থেকে কারখানা খুলতে শুরু করেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ছোট ও মাঝারি কারখানায় লামছামভাবে বোনাস দিলেও মার্চ মাসের পুরো বেতন দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও তারা তা প্রকাশ করেনি। কারণ, আন্দোলনে গেলে চাকরি হারানোর ভয় আছে। বর্তমানে পোশাক কারখানায় চাকরির সংকট রয়েছে। তাই কেউ ঝুঁকি নিতে চাননি। অনেক কারখানা শ্রমিকদের বেতন দিলেও কর্মচারীদের বেতন দেয়নি। ফলে অন্যবারের মতো এবারও অনেক পোশাকশ্রমিকের ঈদ নির্ঝঞ্ঝাট হয়নি।