সিলেট শহরের বর্জ্য ব্যবহৃত হবে লাফার্জহোলসিমের কারখানায়

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) এলাকার প্লাস্টিক ও কঠিন বর্জ্য পরিবেশসম্মতভাবে ব্যবস্থাপনা করবে সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জহোলসিম। এসব বর্জ্য পরিশোধনের পর ব্যবহার হবে লাফার্জহোলসিম সিমেন্টের কারখানায়। এ জন্য সিলেট শহরের লালমাটিয়া ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকায় বর্জ্য পৃথক্‌করণ প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে। এ প্ল্যান্টে প্রাথমিকভাবে দিনে ২০০ টন বর্জ্য পরিশোধন করা হবে। পরে এ সক্ষমতা আরও বাড়ানো হবে।

আজ শনিবার প্ল্যান্টটির উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে লাফার্জহোলসিম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সিলেটের সংসদ সদস্য এ কে আব্দুল মোমেন, হাবিুবর রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইব্রাহিম, সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী প্রমুখ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন ও লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ যৌথভাবে এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এটি দেশের প্রথম ও একমাত্র প্লাস্টিক বর্জ্য পৃথক্‌করণ প্ল্যান্ট। এখানে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর অপচনশীল প্লাস্টিক-জাতীয় পণ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলাদা করা সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্যের টেকসই ব্যবস্থাপনা করা আমাদের দীর্ঘ দিনের চ্যালেঞ্জ। সরকার বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে কাজ করছে। তবে সরকারের একার পক্ষে এ কাজ করা কঠিন।এ জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

সিলেট শহরকে একটি প্লাস্টিকমুক্ত নগরীতে রূপান্তর করা অন্যতম লক্ষ্য বলে অনুষ্ঠানে জানান সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এ উদ্দেশ্যে আমরা লাফার্জহোলসিমের সঙ্গে কাজ করছি।’ এ সময় সিলেটবাসীর কাছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো ও প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কমানোর অনুরোধ করেন তিনি। আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘আপনারা যেখানে-সেখানে প্লাস্টিক পণ্য ফেলে পরিবেশের ক্ষতি করবেন না।’

লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের সিইও মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘আজকের দিনটি আমাদের জন্য একটি মাইলফলক। আগে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে সিসিকের সঙ্গে আমরা কাজ করেছি। ভবিষ্যতে আশপাশের পৌরসভাগুলোকেও এ সুবিধা ব্যবহারে আমরা উৎসাহিত করব।’  

সুনামগঞ্জের ছাতকে লাফার্জহোলসিমের প্ল্যান্ট রয়েছে। দেশের একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ এ প্ল্যান্টে বিভিন্ন ধরনের অপচনশীল পণ্য টেকসই উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। একই পদ্ধতিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের অপচনশীল প্লাস্টিক পণ্যগুলোও প্রক্রিয়াজাত করা হবে বলে জানান মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী। এ ছাড়া দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে পৃথক আইন ও নীতি প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে কথাও বলেন তিনি।

একটি গবেষণার বরাত দিয়ে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের সিইও মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ২০২৫ সালে বাংলাদেশে মোট বর্জ্যের পরিমাণ বছরে ২ কোটি টন ছাড়াবে। তিন দশক আগেও এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৫০ লাখ টন। প্রতি ১০ বছরে বর্জ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ হচ্ছে।

বিশাল পরিমাণে উৎপাদিত এই বর্জ্যকে দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী। তিনি বলেন, এই বর্জ্যের বড় একটা অংশ হলো পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর প্লাস্টিক। দেশে একজন মানুষ বছরে ৯ কেজি প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করে। এতে জনসংখ্যা ১৭ কোটি হিসাব করলে মোট প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের পরিমাণ হয় ১৬ লাখ টনের বেশি; যার পুরোটাই আবার পরিবেশে ফেরত আসছে। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো টেকসই উপায়ে এসব প্লাস্টিক পণ্য ব্যবস্থাপনা করা।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ছাতকে লাফার্জহোলসিমের সিমেন্ট প্ল্যান্টে ক্লিনকার উৎপাদন হয়। ক্লিনকার তৈরির সুবিধা থাকায় এই প্ল্যান্টে টেকসই উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব। বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশে হোলসিম গ্রুপ এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাংলাদেশে ২০১৭ সাল থেকে এ কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। লাফার্জহোলসিমের প্ল্যান্টে বছরে প্রায় এক লাখ টন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব; যা ভবিষ্যতে তিন লাখ টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।