ভোট পড়েছে ৮৯ শতাংশ, শেষের দিকে বিশৃঙ্খলা

বিজিএমইএর নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার এস এম মান্নান। আজ রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ২০২৪-২৬ সাল মেয়াদি নেতৃত্ব নির্বাচনে আজ শনিবার ঢাকা ও চট্টগ্রামে একযোগে ভোট গ্রহণ হয়েছে। ঢাকায় ভোট গ্রহণ শুরুর আগে দুই প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। বিকেলে ভোটকক্ষে বিশৃঙ্খলার ঘটনাও ঘটে। তবে শেষ পর্যন্ত ৮৯ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন।

বিজিএমইএর এবারের নির্বাচনে ৩৫টি পরিচালক পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৭০ জন প্রার্থী। তাঁরা সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম—এই দুই প্যানেল থেকে নির্বাচন করেন। সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার বা দলনেতা এস এম মান্নান, যিনি বর্তমানে বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। আর ফোরামের প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ। তিনি সংগঠনটির সাবেক সহসভাপতি।

জানা গেছে, সকাল পৌনে ১০টার দিকে ভোটকেন্দ্রের নিচে প্রার্থীদের দাঁড়ানো নিয়ে সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম প্যানেলের নেতাদের মধ্যে বচসা হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে ফোরামের একজন প্রার্থী সামান্য আহত হন। পরে উভয় প্যানেলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ব্যালট নিচ্ছেন ভোটারেরা। আজ রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

তারপর ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ভোটাররা আসতে থাকেন। শুরু থেকে নির্বাচন বোর্ডের সদস্যরা ভোটকক্ষের ভেতরে প্রার্থী ও ভোটারদের ছাড়া অন্য কাউকে প্রবেশ করতে দেননি। সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে কড়াকড়ি ছিল। দুপুরে উভয় প্যানেলের নেতারা ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার এস এম মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ভোট সুন্দর পরিবেশে হচ্ছে। কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

এদিকে বেলা তিনটার পর ভোটকক্ষে প্রবেশ করে ভোটারদের পাশাপাশি দুই প্যানেলের কর্মীদেরও সরব উপস্থিতি দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরপর নির্বাচন বোর্ডের সদস্যরা ভোটার ছাড়া অন্যদের বের হওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। তবে কেউ বের হচ্ছিলেন না। এই পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

ভোট গ্রহণের শেষের দিকে এমন বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়। আজ রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

বিকেল চারটার কিছুক্ষণ আগে দেখা গেল, এক ব্যক্তি গোপন কক্ষে একজনকে ব্যালট পেপার দিচ্ছেন। তাঁদের প্রত্যেকের গলায় একটি নির্দিষ্ট প্যানেলের ব্যাজ ঝোলানো। আরেকজন ভোটার ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে ওই প্যানেলের কর্মীকে দেন। সোয়া চারটার দিকে আবার দেখা গেল, আরেকজন গোপন কক্ষে না গিয়েই সিল মারছেন। তাঁর গলায়ও নির্দিষ্ট প্যানেলের ব্যাজ ঝোলানো ছিল।

বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে ভোট গ্রহণ শেষ হয়। ফোরামের প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিজিএমইএর ইতিহাসে কখনো আমরা দেখিনি। মাছের বাজারের মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। আমার আর কিছু বলার নাই।’

বিকেল সোয়া চারটার দিকে প্রকাশ্যে ভোট দিচ্ছেন একজন ব্যক্তি। আজ রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

ভোট কেমন হয়েছে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ভোট সুন্দর হয়েছে। তবে শেষ দিকে কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়েছে।

নির্বাচন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, নির্বাচনে ২ হাজার ৪৯৬ ভোটারের মধ্যে ২ হাজার ২২৬ জন বা ৮৯ শতাংশ ভোট দিয়েছেন। ঢাকায় ২ হাজার ৩২ জন ভোটারের মধ্যে ৯০ দশমিক ৫০ শতাংশ বা ১ হাজার ৮৩৯ জন ভোট দিয়েছেন। আর চট্টগ্রামে ৪৬৪ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৮৩ দশমিক ৪০ শতাংশ বা ৩৮৭ জন। সন্ধ্যা ছয়টার পর ভোট গণনা শুরু হয়। রাত নয়টা পর্যন্ত এক তৃতীয়াংশ ভোট গণনা হয়েছে বলে জানা যায়।

ভোট গ্রহণ শেষে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলামিন সাংবাদিকদের বলেন, ভোট সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ছোট এক-দুটি অভিযোগ ছিল। বড় কোনো অভিযোগ আসেনি। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ফোরামের প্রার্থীদের কারও কারও অভিযোগ, ভোট কেনাবেচা হয়েছে। উত্তরে জাহাঙ্গীর আলামিন বলেন, কেউ ভোট কেনাবেচা করেনি।

এবারের নির্বাচন নিয়ে শুরু থেকেই উত্তাপ ছড়িয়েছে। গত জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ২ হাজার ৫৬৩ জনের প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর ৪২৯ জনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আপিল বোর্ডে আবেদন করেন ফোরামের প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ। তিনি অভিযোগ করেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওয়েবসাইট তল্লাশি করে দেখা গেছে, এই ভোটারদের আয়কর প্রদানের হালনাগাদ তথ্য নেই। পরে বিষয়টি নিয়ে আপিল বোর্ড শুনানি করে। তাতে ৬৭ জন ভোটার বাদ পড়েন। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য এফবিসিসিআই আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন ফয়সাল সামাদ। পরে তিনি উচ্চ আদালতেও যান।

সর্বশেষ ২০২১ সালের নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদ ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩৫ পরিচালক পদের মধ্যে ২৪টিতে বিজয়ী হয়। আর ফোরাম ১১ পরিচালক পদে জয় লাভ করে। তখন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানের নেতৃত্বে দুই বছরের জন্য পর্ষদ গঠিত হয়। এরপর আরও এক বছর সময় বাড়িয়ে নেয় বর্তমান পর্ষদ। সে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই ভোট হয়েছে।