নৌকা নিয়েও জিততে পারলেন না যেসব বড় ব্যবসায়ী

ইউসুফ আবদুল্লাহ, সেলিমা আহমেদ ও তাহজীব আলম সিদ্দিকী।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন কুমিল্লা-৩ আসনে ২০১৪ সাল থেকে টানা দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র আর ২০১৮ সালে নৌকার প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন তিনি। এবারের নির্বাচনেও নৌকার কান্ডারি হয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত জয়ের দেখা পাননি সাবেক এই ব্যবসায়ী নেতা।

ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের মতো একাধিক বড় ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকার প্রার্থী হয়েও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধরাশায়ী হয়েছেন। আবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেও একাধিক বড় ব্যবসায়ী জয়ী হতে পারেননি।

এবারের সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জানায়, ১ হাজার ৯৪৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ১ হাজার ১৪২ জনই ব্যবসায়ী (৫৮ দশমিক ৭১ শতাংশ)। আওয়ামী লীগের ২৬৫ জনের মধ্যে ১৭০ জন, জাতীয় পার্টির ২৬২ জনের মধ্যে ১৭৩ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪৩৩ জনের মধ্যে ৩০২ জনই ব্যবসায়ী।

হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত ১৬ জনের ১০০ কোটি টাকার বেশি স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এই ১৬ জনই পেশায় ব্যবসায়ী। সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকার সম্পদের মালিক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।

শতকোটিপতি প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন কুমিল্লা-৩ আসনের প্রার্থী ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৩০৫ কোটি টাকার বেশি। তিনি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম সরকারের কাছে হেরেছেন। ঈগল প্রতীক নিয়ে জাহাঙ্গীর আলম ভোট পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৯৭১টি। আর নৌকা প্রতীকে ইউসুফ আব্দুল্লাহ ভোট পেয়েছেন ৭২ হাজার ১৪টি।

ঝিনাইদহ-২ (নলডাঙ্গা, ঘোড়াশাল, ফুরসুন্দি ও মহারাজপুর এবং হরিণাকুণ্ডু উপজেলা) আসনে ২০১৪ সাল থেকে টানা দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য হয়েছেন ডরিন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহজীব আলম সিদ্দিকী। ডরিন গ্রুপের ব্যবসার মধ্যে রয়েছে শেয়ারবাজার, তৈরি পোশাক, বস্ত্র, আবাসন, নির্মাণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সিমেন্ট এবং হোটেল ও রিসোর্ট।

তাহজীব আলম সিদ্দিকী ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র এবং ২০১৮ সালে নৌকার প্রার্থী হিসেবে জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হন। এবারের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে ভোটে লড়েছেন। যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর কাছে তিনি ২০ হাজার ৫৭১ ভোটে পরাজিত হয়েছেন।

জানতে চাইলে সোমবার রাতে তাহজীব আলম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোটাররা আমাকে যোগ্য মনে করে নাই। সে জন্য হয়তো বিকল্প প্রার্থীকে বেছে নিয়েছে। মানুষ পরিবর্তন চায়, সেটিও কারণ হতে পারে।’

হোমনা ও মেঘনা উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-২ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে ভোটে লড়েছেন নিটল–নিলয় গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা আহমাদ। তিনি বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি পদেও আছেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মাতলুব আহমাদের স্ত্রী সেলিমা আহমাদ।

এই আসন থেকে সেলিমা আহমাদ ২০১৮ সালে ২ লাখ ৬ হাজার ১৬ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। তবে এবারের নির্বাচনে তিনি ভোট পেয়েছেন ৪২ হাজার ৪৫৩টি। তাঁর বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল মজিদ ৪৪ হাজার ৪১৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জুয়েলার্স ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। তিনি ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন দিলীপ। যদিও শেষ পর্যন্ত জয়ের দেখা পাননি তিনি।

এই আসনে ৯৬ হাজার ২৬৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী সোলায়ামান হক জোয়ারদার। অন্যদিকে ঈগল প্রতীক নিয়ে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ভোট পেয়েছেন ৭২ হাজার ৭৬৮টি।

ঢাকা-১ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম। যদিও তিনি নৌকার প্রার্থী বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের কাছে ১ লাখের বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছেন। সালমান এফ রহমান ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সাবেক সভাপতি। ২০১৯ সাল থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।