ভিসা জটিলতায় দেশের ৪১ প্রতিষ্ঠানের দুবাইয়ের মেলায় অংশগ্রহণ অনিশ্চিত

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)

ভিসা–জটিলতায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে গালফ ফুড ফেয়ারে বাংলাদেশি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এতে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি ক্রয়াদেশও কমার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

১৭ ফেব্রুয়ারি পাঁচ দিনব্যাপী এই গালফ ফুড ফেয়ার শুরু হবে। মেলায় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ব্যবস্থাপনায় ৩২৪ বর্গমিটার আয়তনের বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন থাকবে। আবেদন করে এই প্যাভিলিয়নে বুথ পাচ্ছে দেশীয় ৪১ প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান ৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা করে ইপিবিকে জমাও দিয়েছে। বুথের বাকি ৩০ শতাংশ অর্থ ভর্তুকি হিসেবে দেবে ইপিবি।

গালফ ফুড ফেয়ারে অংশ নেবে এমন একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে গত জুলাইয়ে দুবাইয়ের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তার পরপরই ভিসা সীমিত করে ইউএই। সে জন্য অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ পাননি ব্যবসায়ীরা। পরে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) নেতারা বিষয়টি ইপিবিকে লিখিতভাবে জানায়। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চাইতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে ইপিবি। তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, দুবাইয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আয়োজকদের পরামর্শে তাদের এক এজেন্টের মাধ্যমে ভিসার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ জন্য ইপিবি মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে লিখিত বন্ডও নেওয়া হয়। যেখানে লেখা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের যারা দুবাই যাবেন, তারা মেলা শেষে ফিরে আসবেন। এমনকি প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এলওআই (লেটার অব ইন্ট্রোডাকশন) দিয়েছে। এত কিছুর পরও আজ সোমবার পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণকারীদের বিপরীতে ভিসা মেলেনি।

জানতে চাইলে বাপার সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক ইকতাদুল হক গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা ই–মেইলে জানিয়েছে, এম্বাসি এখনো সাড়া দেয়নি।’ তিনি আরও বলেন, মেলায় অংশ নিতে না পারলে পণ্যের ক্রয়াদেশ কমবে। এতে রপ্তানি কমে যাওয়ার শঙ্কা থাকবে।

জানা যায়, এবারের গালফ ফুড ফেয়ারে ইস্পাহানি ফুডস, হবিগঞ্জ অ্যাগ্রো, প্রাণ ফুডস, কিষোয়ান স্ন্যাকস, বনফুল অ্যান্ড কোম্পানি, ফুলকলি ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ইন্ডাস্ট্রিজ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, বম্বে সুইটস, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, আকিজ এসেনশিয়াল, হিফস অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ, ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টস, এসিআই ফুডস, বসুন্ধরা মাল্টি ফুডস প্রোডাক্টস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

জানতে চাইলে হিফস অ্যগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছৈয়দ মুহাম্মদ সোয়াইব হাছান প্রথম আলোকে বলেন, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের সবচেয়ে বড় মেলা গালফ ফুড ফেয়ার। এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি মেলা। কারণ, এখানে শুধু ব্যবসায়ীরাই আসেন। বাংলাদেশের কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতের রপ্তানি যতটা এগিয়েছে, তার অনেকটাই এই মেলার অবদান।  তিনি জানান, কয়েকজন ব্যবসায়ীর আগে থেকে ভিসা থাকলেও অধিকাংশের নেই।

দুবাই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার আয়োজিত গালফ ফুড ফেয়ার বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের প্রদর্শনী। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পরিবেশক প্রতিষ্ঠান নতুন নতুন পণ্য সম্পর্কে জানতে হাজির হয়। শুধু তা–ই নয়, এই প্রদর্শনী থেকেই মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের বিপুল ক্রয়াদেশ পান উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।

২০২৩ সালে গালফ ফুড ফেয়ারে অংশ নেয় খাদ্য উৎপাদন, বিপণন ও পরিবেশনের সঙ্গে যুক্ত ১২০ দেশের প্রায় পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বাংলাদেশের ছিল ৩৯টি প্রতিষ্ঠান। ওই বছর ১ কোটি ৪১ লাখ ডলারের তাৎক্ষণিক ক্রয়াদেশ পেয়েছিল প্রতিষ্ঠানগুলো। পরে আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতে বিপুল ক্রয়াদেশ পেয়েছিল তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী বলেন, সরকারের দায়িত্ব নিয়ে ভিসা জটিলতার বিষয়টি সমাধান করা উচিত। যত দেরি হবে, তত আমাদের খরচ বাড়বে।

জানতে চাইলে ইপিবির উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম সোমবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভিসার বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য কাল জানাতে পারবেন বলে জানান তিনি।