সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা

এমসিসিআই

সরকারি পর্যায়ে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার বাস্তবায়ন হয় অত্যন্ত ধীরগতিতে। কারণ, অনেক সরকারি কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জানাতে দেরি করেন। আর এই দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষতির মুখে পড়েন ব্যবসায়ীরা। এমন অভিযোগ উঠে এসেছে ব্যবসায়ীদের শতবর্ষী পুরোনো সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই বা মেট্রো চেম্বার) এক ভোজসভায়।

রাজধানীর পুলিশ প্লাজা কনকর্ড শপিং মলে গতকাল শনিবার এ ভোজসভার আয়োজন করে মেট্রো চেম্বার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। ব্যবসায়ীদের কথা শুনে তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারি প্রতিষ্ঠাগুলোকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সমাধানের পথে হাঁটার কথা জানান তিনি।

মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া আরও বলেন, অবকাঠামো খাতে ইতিমধ্যে আমাদের বেশ উন্নতি হয়েছে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থায়নের সুযোগ আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হলে প্রয়োজনীয় নীতিগত পরিবর্তন ও সংস্কার আনতে হবে।

এমসিসিআইয়ের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কামরান টি রহমান, সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম, মহাসচিব ফারুক আহমেদ, এমসিসিআইয়ের পরিচালক গোলাম মইনুদ্দিনসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা।

স্বাগত বক্তব্যে এমসিসিআইয়ের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বছর বছর বিভিন্ন নিবন্ধন নবায়ন করা ব্যবসা সহজীকরণের পথে অন্যতম বাধা। ব্যবসায়ীদের প্রতি বছরই কোনো না কোনো সনদ নবায়ন করতে হয়। বিশেষ করে তা ছোট শিল্পের জন্য খুবই অসুবিধার কারণ। এসব নিবন্ধন অন্তত পাঁচ বছরের জন্য করার দাবি জানিয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা পরিদর্শন করা যেতে পারে। সমস্যা পেলে নিবন্ধন বাতিলও করা যায়। তবে নিবন্ধনগুলো অন্তত পাঁচ বছরের জন্য হওয়া উচিত।

সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, অর্থনীতির টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য রপ্তানিমুখী প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। আর রপ্তানি প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ। এ ক্ষেত্রে সেমিকন্ডাক্টর ও মাইক্রো চিপের মতো হাইটেক বা উচ্চপ্রযুক্তির পণ্যের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, সরকারি পর্যায়ে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, অনেক ক্ষেত্রে তার বাস্তবায়ন হয় অত্যন্ত ধীরগতিতে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বেসরকারি খাত উন্নয়ন নীতিবিষয়ক সমন্বয় কমিটিকে (পিএসডিপিসিসি) আরও তৎপর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

একই অনুষ্ঠানে এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন রশীদ বলেন, এলপিজি খাতে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে আমার ২৮টি সরকারি সংস্থা থেকে ২৮ ধরনের সনদ নিতে হয়েছে। এটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। এই প্রক্রিয়া সহজ করা প্রয়োজন।

বিএসআরএম গ্রুপের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স প্রধান সৌমিত্র কুমার মুৎসুদ্দি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত জানাতে অনেক দেরি করেন। এতে দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।

অনুষ্ঠানে বিডার ওএসএস বা এক দরজায় সেবা নিয়ে অসন্তোষের কথা জানান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী। তিনি বলেন, বিডার ওএসএস সেবা চালু হলেও এর বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর থেকে অনেক বাধা রয়েছে। এটা যদি কার্যকর করা যেত, তাহলে আমরা অনেক দপ্তরে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতাম।

এ ছাড়া একজাতীয় পণ্য উৎপাদনে পৃথক নিবন্ধন নেওয়ার বিধান নিয়েও কথা বলেন উজমা চৌধুরী। তিনি বলেন, কোম্পানি আইন অনুসারে, একটি কোম্পানির অধীনে আমরা সব ধরনের কাজ করতে পারব। বাস্তবে আমাদের বিভিন্ন দপ্তর থেকে পৃথক নিবন্ধন নিতে হচ্ছে। এই বাড়তি নিবন্ধন না লাগলে ব্যবসা আরও সহজ হতো।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার মধে৵ একটা বড় ব্যবধান রয়েছে বলে জানান সিঙ্গারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম এইচ এম ফাইরোজ। তিনি বলেন, এটি নিয়ে নীতিনির্ধারকদের কাজ করা প্রয়োজন।

প্রযুক্তি খাতে সরকারি সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি কার্যকর ওএসএস বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন আমরা নেটওয়ার্কসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ফরহাদ আহমেদ। আর বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে একাধিক দাম থাকা উচিত না বলে জানান চালডালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াসিম আলিম।