ইউনিপেটুইউর ৪২০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে স্থানান্তরের আদেশ

বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড শাখায় জমা থাকা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি (এমএলএম) ইউনিপেটুইউর ৪২০ কোটি ১৪ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এমএলএম কোম্পানিটির পাঁচজন বিনিয়োগকারীর করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া এক রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আপিল আজ মঙ্গলবার নির্দেশনাসহ নিষ্পত্তি করেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী।

আদালতে দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানি করেন। পাঁচজন বিনিয়োগকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অনীক আর হক।

আইনজীবী অনীক আর হক প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের রায়ের ফলে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত পাওয়ার পথ সুগম হয়েছে। ওই অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অবিলম্বে স্থানান্তর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ১৮ ধারা অনুসারে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি (বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি ফেরত বিষয়ে) দিতেও বলা হয়েছে। ধারাটি অনুসারে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বিনিয়োগকারীসহ যাঁদের পাওনা দাবি আছে, তাঁরা যথাযথ নথি-তথ্যাদিসহ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদালতে আবেদন করতে পারবেন।

অবশ্য দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। কিছু নির্দেশনাসহ দুদকের আপিল নিষ্পত্তি করেছেন। আপাতত রাষ্ট্রের টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলেই থাকল। তবে পূর্নাঙ্গ রায় পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানান, ইউনিপেটুইউতে বিনিয়োগ করা অর্থ আদায়ের জন্য মো. মিজানুর রহমানসহ পাঁচ বিনিয়োগকারী ২০১২ সালে ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ-২য় আদালতে মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে তাঁরা ৬৫ কোটি টাকার ডিক্রি পান। তবে এ আদেশ কার্যকরের জন্য ২০১৪ সালে একই আদালতে তাঁরা মানি এক্সিকিউশন মামলা করেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব জব্দ থাকায় ২০১৫ সালের ৯ মার্চ তাঁদের আবেদন না মঞ্জুর করেন আদালত।

এরপর মো. মিজানুর রহমানসহ পাঁচজন বিনিয়োগকারী অর্থ ফেরত পেতে হাইকোর্টে আবেদন করেন। চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ-২য় আদালতের ২০১৫ সালের ৯ মার্চ দেওয়া আদেশ বাতিল করা হয়। এর বিরুদ্ধে দুদক প্রথমে লিভ টু আপিল করে। তাতে হাইকোর্টের রায় স্থগিত হয়। পরবর্তী সময় ২০১৮ সালে নিয়মিত আপিল করে দুদক। এ আপিলের শুনানি শেষে আজ রায় দেন আপিল বিভাগ।

অন্যদিকে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ইউনিপেটুইউর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলায় ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ রায় দেন। রায়ে ইউনিপেটুইউর চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৬ জন কর্মকর্তাকে ১২ বছর করে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। ইউনিপেটুইউর নামীয় ও আসামিদের পরিচালিত সম্পত্তির পাশাপাশি মামলাসংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে অবরুদ্ধ ৪২০ কোটি ১৪ লাখ ২৯ হাজার ৬৬৩ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়।

ওই অর্থ রাষ্ট্রের অনুকূলে এখনো বাজেয়াপ্ত হয়নি বলে জানান পাঁচ বিনিয়োগকারীর আইনজীবী অনীক আর হক। তিনি বলেন, ইউনিপেটুইউর ব্যাংক হিসাব দুদক কখনোই জব্দ করেনি বলে হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে। এখন ওই টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।