বাংলাদেশের পাটপণ্য আমদানির ওপর কাউন্টারভেলিং ডিউটি বা প্রতিকারমূলক শুল্ক বসাতে তদন্ত করছে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য বিভাগ। অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে পাঠানো প্রশ্নমালার আনুষ্ঠানিক উত্তর পাঠানোর সময়সীমা ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে তারা।
ভারতের বাণিজ্য বিভাগের উপপরিচালক মনোজ কুমার গত বুধবার এ–সংক্রান্ত এক নোটিশে সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি জানান। বাংলাদেশের পাশাপাশি একই তদন্ত নেপালের বিরুদ্ধেও হচ্ছে।
নোটিশে বলা হয়, গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ ও নেপালকে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে অভিযোগ বিষয়ে প্রশ্নমালার উত্তর পাঠাতে বলা হয়েছিল। তবে দেশগুলোর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময়সীমা ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে আর সময় বাড়ানো হবে না বলে জানানো হয় নোটিশে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ গত ২১ আগস্ট ই–মেইল পাঠিয়ে ভারত ২ সেপ্টেম্বর পরামর্শ সভায় বসার আহ্বান জানিয়েছিল। ২৯ আগস্ট ভারতকে এক ই–মেইল বার্তায় বাংলাদেশ জানিয়েছিল পরামর্শ সভার প্রস্তুতির জন্য ৬০ দিন সময় দরকার। ভারত তার জবাব দেয়নি। পরবর্তীতে অভিযোগ তদন্তে ভারতের প্রশ্নমালা পূরণ করতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন একটি ডেস্ক চালু করে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান তাপস প্রামাণিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশন বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। আমরা ব্যবসায়ীরাও সহযোগীতা করছি।’
পাটপণ্যের ওপর কাউন্টারভেলিং শুল্ক আরোপের তদন্ত শুরু করা হলেও ২০১৮ সালে বাংলাদেশি একই পণ্যের ওপর অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে ভারত সরকার। প্রথমে পাঁচ বছরের জন্য এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে সেটি আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়। তখন বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পাটপণ্যে ভিন্ন ভিন্ন হারে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়।
ভারতের পাটকল সমিতি (আইজেএমএ) এবং এ পি মেস্তা টোয়াইন মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (এজেএমএ) যৌথ আবেদনের পর বাংলাদেশ ও নেপালের পাটপণ্যের ওপর কাউন্টারভেলিং শুল্ক বসাতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে তদন্তের ঘোষণা দেয় বিভাগটি। ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই তদন্তের বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়।
ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাটপণ্যে ভর্তুকি দেওয়াবিষয়ক ১২টি অভিযোগ তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলো (ইপিজেড) ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় (ইজেড) পাটপণ্যের ওপর নানা ধরনের ভর্তুকি দেওয়া হয়। যে কারণে ভারতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
তদন্তের নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের ইপিজেডে অবস্থিত কারখানাগুলো লভ্যাংশ কর থেকে অব্যাহতি পায় এবং বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ পায়। আর ইজেডের কারখানাগুলো ১০ বছরের কর অবকাশ ও কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক অব্যাহতি পায়। এ ছাড়া নগদ সহায়তা, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়।