ক্রয়াদেশ আসার গতি বাড়ছে

চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ।

তৈরি পোশাকশিল্প খাত
ছবি: প্রথম আলো

২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানায় ক্রয়াদেশ আসার গতি বেড়েছে। পোশাকের এসব ক্রয়াদেশ মূলত আগামী শীত মৌসুমের। তারপরের মৌসুম, অর্থাৎ বসন্ত ও গ্রীষ্মে পোশাকের ক্রয়াদেশের অনুসন্ধান এরই মধ্যে করতে শুরু করেছে বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো। তাতে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কার মধ্যেও আগামী মার্চ থেকে ভালো ক্রয়াদেশ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

অবশ্য রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের কয়েকজন উদ্যোক্তা বললেন, বড়দিনের পর ক্রয়াদেশ আসার গতি কিছুটা বেড়েছে। তারপরও আগামী শীতের পোশাকের ক্রয়াদেশ গত বছরের একই মৌসুমের তুলনায় ১৫-২০ শতাংশ কম। কারখানাভেদে এই চিত্র অবশ্য ভিন্ন। অনেক বড় কারখানার তুলনায় ছোট-মাঝারি কারখানায় ভরপুর ক্রয়াদেশ রয়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সার্বিকভাবে পোশাকের ক্রয়াদেশের এই গতিকে ‘মন্দের ভালো’ বলছেন রপ্তানিকারকেরা।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বসন্ত ও গ্রীষ্মের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কম ক্রয়াদেশ আসার দাবি করেছিলেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। যদিও ক্রয়াদেশ কম আসার কোনো নেতিবাচক প্রভাব রপ্তানিতে দেখা যায়নি। চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। ওই অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, আগামী শীতের ক্রয়াদেশ যে খুব ভালো আসছে, তা বলা যাবে না। গত মৌসুমের চেয়ে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ক্রয়াদেশ কম। অনেক কারখানায় বেশ কিছু লাইন বন্ধ। কেউ শ্রমিক ছাঁটাই করেছে। কোনো কারখানায় ২ ঘণ্টাও ওভারটাইম হয় না বললেই চলে। তিনি আরও বলেন, ‘২০২৪ সালের জানুয়ারির পর ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও বলছেন তাঁরা চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া থেকে পোশাক উৎপাদন কমাবে। বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনা বাড়াবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন বার্তা আমাদের আশাবাদী করছে।’

নিপা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. খসরু চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কারখানাগুলো ৮০ শতাংশ সক্ষমতায় চলছে। দুই মাস ধরে ওভারটাইম বন্ধ। ক্রয়াদেশের যে অবস্থা, তাতে আগামী কয়েক মাস এভাবেই চলবে। শীতের ক্রয়াদেশ প্রত্যাশা অনুযায়ী আসেনি। কারণ, ইউরোপ-আমেরিকায় উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে পোশাক বিক্রি কম হয়েছে।’ ক্রয়াদেশের পাশাপাশি ক্রেতারা পোশাকের দামও ৭ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত কম দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন এই উদ্যোক্তা।

এদিকে আগামী শীত মৌসুমের ভরপুর কাজ রয়েছে, এমন পোশাক কারখানাও আছে। তেমনই একটি কারখানা হচ্ছে, সাভারের এনআর ক্রিয়েশন। কারখানাটিতে কাজ করেন প্রায় ৭০০ শ্রমিক। জানতে চাইলে এনআর ক্রিয়েশনের স্বত্বাধিকারী আলকাছ মিয়া বলেন, ‘গত মাসে আমরা গ্রীষ্ম মৌসুমের পোশাক রপ্তানি শেষ করেছি। এবার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫-২০ শতাংশ। আগামী শীতেও আমাদের যে ক্রয়াদেশ আছে, তাতে ভালো প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করছি।’

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ২ হাজার ৭৪১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে কেবলমাত্র সেপ্টেম্বরে পোশাক রপ্তানি সাড়ে ৭ শতাংশ কমেছিল।

জানতে চাইলে বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘আগামী শীতের ক্রয়াদেশ আসা প্রায় শেষ। গত বছর থেকে ক্রয়াদেশ আসা বাড়লেও প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। যদিও ক্রেতাদের কাছ থেকে আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশের অনুসন্ধান ভালো পাচ্ছি।’