বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বাণিজ্যে দ্রুত অগ্রগতি ঘটছে

বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন আজ বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের সোনারগাঁ সিডস ক্রাশিং মিলস পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) পরিচালক তানজিমা মোস্তফা, তাসনিম মোস্তফাসহ উভয় পক্ষের পদস্থ কর্মকর্তাগণছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন বলেছেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র কৃষি বাণিজ্যের দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটছে। আজ বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চলে সোনারগাঁও সিডস ক্রাশিং মিলস পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন। এটি মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান।

মেঘনা গ্রুপের সিডস ক্রাশিং মিলস পরিদর্শনকালে ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গে ছিল ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল। তাঁদের স্বাগত জানান এমজিআইয়ের পরিচালক তানজিমা মোস্তফা ও তাসনিম মোস্তফা। এ সময় এমজিআইয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন এমজিআইয়ের সয়াবিন ক্রাশিং বা মাড়াই কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ এবং ডেল্টা অ্যাগ্রোর সঙ্গে এক বিলিয়ন ডলারের মার্কিন সয়াবিন রপ্তানির জন্য চুক্তি করেছি। দেড় বছর আগে যেখানে বাংলাদেশে ৩৫০ মিলিয়ন বা ৩৫ কোটি ডলারের মার্কিন সয়াবিন আমদানি হতো, সেখানে এ বছর তা বেড়ে ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে এখন ১ বিলিয়ন তথা ১০০ কোটি ডলারের পথে রয়েছে।’

মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর বলেন, এই বর্ধিত বাণিজ্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে ও বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি সত্যিই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। এটি দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করছে। উচ্চমানের মার্কিন সয়াবিন আমেরিকান কৃষক ও বাংলাদেশের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান—বিশেষত মেঘনার মতো কোম্পানিগুলোর জন্য লাভজনক। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সয়াবিন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমজিআই এই অংশীদারত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন মেঘনা গ্রুপকে তাদের আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানান।

এমজিআইয়ের পরিচালক তানজিমা মোস্তফা বলেন, ‘আমাদের চেয়ারম্যান সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে বিপুল পরিমাণ মার্কিন সয়াবিন আমদানির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা ইতিমধ্যে ৭ লাখ মেট্রিক টনের বেশি সয়াবিন আমদানি করেছি, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আমাদের লক্ষ্য এক মিলিয়ন টন সয়াবিন আমদানি করা। এ বছর দেশে যে পরিমাণ মার্কিন সয়াবিন আমদানি হয়েছে, তার অর্ধেকের বেশি আমদানি করেছে মেঘনা গ্রুপ।’ তিনি জানান, বর্তমানে এমজিআইয়ের দুটি ক্রাশিং মিল যথাক্রমে মেঘনা সিডস ক্রাশিং মিলস ও সোনারগাঁও সিডস ক্রাশিং মিলস মোট দৈনিক ৭ হাজার ৫০০ টন সয়াবিন ক্রাশিং সক্ষমতা রয়েছে, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।

গত ৩১ জুলাই বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমিয়ে আনতে অন্য পদক্ষেপের পাশাপাশি দেশটি থেকে আমদানি বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। গত মাস থেকে ব্যবসায়ীদের অঙ্গীকারের আমদানি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে শুরু করে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই মাসের শেষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় চার লাখ টন সয়াবিনবীজ আমদানির তাৎক্ষণিক সমঝোতা হয়। এমজিআই চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ১৩ কোটি মার্কিন ডলারের তিন লাখ টন সয়াবিনবীজ আমদানির সমঝোতা করেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর আরও দুই লাখ টন সয়াবিনবীজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছে এমজিআই। সব মিলিয়ে গ্রুপটি পাঁচ লাখ টন সয়াবিনবীজ আমদানি করছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সয়াবিন তেল ও প্রাণিখাদ্য তৈরির কাঁচামাল হলো সয়াবিনবীজ।