গরমে চাঙা আইসক্রিমের বাজার 

অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে অনেক কারখানা রাতের পালায়ও আইসক্রিম উৎপাদন করছে। গতবারের চেয়ে ২০ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধির আশা।

আইসক্রিম খাচ্ছেন তরুণ-তরুণীরাফাইল ছবি

প্রচণ্ড দাবদাহে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বৈশাখের এমন রোদেলা দিনে বাইরে যাওয়া মানেই প্রচণ্ড গরমে গলা শুকিয়ে আসা। এমন সময় ঠান্ডা কিছু খেতে মনে চায়। শুষ্ক গলা ভেজাতে ছোট-বড়, নারী-পুরুষনির্বিশেষে আইসক্রিম খেতে চায়। ফলে আইসক্রিমের বেচাবিক্রি বেশ বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত এই চাহিদা মেটাতে অনেক কারখানা এখন দিনে তিন পালাই নয়, রাতের পালায়ও চালু রাখা হয়েছে। এতে পণ্যটির বিক্রি এবার ২০ শতাংশের মতো বাড়তে পারে বলে কোম্পানিগুলো আশা করছে। 

বিভিন্ন কারখানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, আইসক্রিম তৈরির কাঁচামালের দাম বাড়তির দিকে। এ রকম পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলো পণ্যভেদে ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মতো দাম সমন্বয় করেছে। 

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনার সময়ে আইসক্রিমের বাজার বড় ধরনের ধাক্কা খায়। যেমন, ২০২০ সালে আইসক্রিম বিক্রির মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই করোনার সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় এই খাতের ব্যবসায়ে চরম মন্দাভাব দেখা দেয়। এরপর ২০২২ সাল থেকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গরমের তীব্রতা বেশি থাকায় আইসক্রিমের চাহিদা বাড়ছে। তাতের প্রতিবছর বাজারও বড় হচ্ছে। সারা বছর আইসক্রিমের যে ব্যবসায় হয়, তার ৪০ শতাংশের মতো হয়ে থাকে এপ্রিল থেকে জুন তিন মাসে। গত বছর আইসক্রিমের বাজার ছিল ২ হাজার ৩০০ থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার, যা চলতি বছর তিন হাজার কোটিতে উন্নীত হবে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।

মৌসুমের শুরু থেকেই এবার বেচাকেনা ভালো। অতিরিক্ত চাহিদার ফলে কারখানা সারা দিন চালাতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে গতবারের তুলনায় এ খাতে এবার ২০ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হতে পারে।
মাহমুদ পাটোয়ারী, জাতীয় বিক্রয় ব্যবস্থাপক, কোয়ালিটি আইসক্রিম 

জানতে চাইলে কোয়ালিটি আইসক্রিমের জাতীয় বিক্রয় ব্যবস্থাপক মাহমুদ পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, মৌসুমের শুরু থেকেই এবার বেচাকেনা ভালো। অতিরিক্ত চাহিদার ফলে কারখানা সারা দিন চালাতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে গতবারের তুলনায় এ খাতে এবার ২০ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হতে পারে। তবে কাঁচামালের দাম অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকায় কোম্পানিগুলো আইসক্রিমের দাম কিছুটা বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। তবে খরচের তুলনায় দাম খুব বেশি বৃদ্ধি না পাওয়ায় বিক্রিতে বড় ধরনের কোনো প্রভাব ফেলছে না বলে মনে করেন তিনি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আইসক্রিমশিল্প আমদানিনির্ভর একটি খাত। এ খাতে ব্যবহৃত মিল্ক ফ্যাট, ফুল ক্রিম দুধ ও ফ্লেভার—এসব কাঁচামাল ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো ডেইরিসমৃদ্ধ দেশগুলো থেকে আসে। বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে। দেশের বাজারে আইসক্রিমের দাম সমন্বয় হয়েছে পণ্যভেদে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ।

মগবাজারের ভাই ভাই স্টোরের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গরম এলে আইসক্রিমের মতো ঠান্ডাজাতীয় খাবারের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এবারও বেচাবিক্রি ভালো। তবে দাম বেড়েছে। তবে স্কুল-কলেজ খোলা থাকলেই আইসক্রিমের বেচাবিক্রি বেশি হয়ে থাকে। 

এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ডলারের বাজারে অস্থিরতার কারণে আইসক্রিম পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে ইগলু, পোলার, লাভেলো, কোয়ালিটি, জাএনজি, ব্লুপ ও স্যাভয়ের মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলো। আইসক্রিমশিল্পে পণ্য উৎপাদনে এককালীন বিনিয়োগ করা হলেও পণ্য পরিবহন ও বাজারজাতকরণের জন্য প্রতিবছর বিনিয়োগ করতে হয়। আইসক্রিম পরিবহনে যেসব বিশেষায়িত ফ্রিজার ভ্যান ও সংরক্ষণের জন্য অত্যাধুনিক রেফ্রিজারেটর ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর অধিকাংশই আসে বিদেশ থেকে। বিশেষ করে ক্রেতা আকর্ষণের জন্য বিক্রেতারা রেফ্রিজারেটরের পণ্য সাজিয়ে রাখেন। 

রাজধানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শারমিন সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত গরমের দিনে মানুষ আইসক্রিম বেশি খান। তবে বছরব্যাপীই এর চাহিদা থাকে। এটাকে আজকাল অনেকে তো লাইফস্টাইলের অংশও মনে করেন।  

দ্বিগুণ মুনাফা লাভেলোর

এদিকে প্রচণ্ড গরম ও রোজার কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চে ভালো মুনাফা করেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আইসক্রিম প্রস্তুত ও বিপণনকারী কোম্পানি লাভেলো। কোম্পানিটি সম্প্রতি তাদের এই প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে কোম্পানিটি ৪০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। গত বছরের একই সময়ে তাদের বিক্রির পরিমাণ ছিল ২৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে লাভেলোর বিক্রি বেড়েছে ১৬ কোটি টাকা বা প্রায় ৬৭ শতাংশ। বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিটির মুনাফাও বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটি কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে ৬ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে মুনাফা করেছিল প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে আড়াই কোটি টাকা বা প্রায় ৭৩ শতাংশ।