জমি পেল চার প্রতিষ্ঠান

হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইফাদ মোটরস, ডার্ড গ্রুপ ও ইস্ট ওয়েস্ট ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর ও কক্সবাজারের টেকনাফে সাবরাং পর্যটন অঞ্চলে ১৭ একর জমি পেল দেশের চারটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইফাদ মোটরস, ডার্ড গ্রুপ ও ইস্ট ওয়েস্ট ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস লি.। এই চার কোম্পানি মোট ৪৬ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে, যা বাংলাদেশের ৪ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকার মতো (প্রতি ডলার ৯৯ টাকা ধরে)। কোম্পানিগুলোতে প্রায় সাড়ে আট হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে জমি বরাদ্দের বিষয়ে গতকাল বুধবার চারটি প্রতিষ্ঠানের আলাদা চুক্তি হয়েছে। চুক্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সই করেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বেজার কার্যালয়ে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় বেজা ও জমি পাওয়া চার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এর আগে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ৩০ একর জমি পেয়েছিল। কিন্তু কারখানা স্থাপনে ওই জমিতে তাদের হচ্ছে না। সে জন্য তাদের চাহিদা বিবেচনা নতুন করে গতকাল আরও ১০ একর জমি দেওয়া হয়। এই কোম্পানি গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে ১৯৯৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। তারা ব্যবসা বাড়ানোর অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে মোট পাঁচটি প্ল্যান্ট স্থাপন করতে যাচ্ছে। এতে কর্মসংস্থান হবে সাত হাজার মানুষের। প্রতিষ্ঠানটি সেখানে ৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য অনেক শিল্প গ্রুপ জমি বরাদ্দ নিয়েছে। কিন্তু তারা এখনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেনি। হয়তো তারা অপেক্ষা করছে কখন জমির দাম বাড়বে। তখন তারা জমি বিক্রি করবে। কিন্তু এটি করার সুযোগ নেই।
শেখ ইউসুফ হারুন, নির্বাহী চেয়ারম্যান, বেজা 

হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ হালিমুজ্জামান জানান, তাঁদের এখন ৯০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করে ওষুধ তৈরি করতে হয়। তাই কাঁচামালের আমদানিনির্ভরতা কমাতে তাঁরা বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। সেখানে তাঁরা ওষুধ তৈরির পাশাপাশি কাঁচামালও উৎপাদন করবেন। হালিমুজ্জামান আরও জানান, বাংলাদেশে পোশাকের পর ওষুধশিল্পই হবে সবচেয়ে সম্ভাবনায় খাত। এরই অংশ হিসেবে তাঁরা ব্যবসা সম্প্রসারণ করছেন।

ইফাদ মোটরস বাংলাদেশের ইফাদ গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ইফাদ গ্রুপ মূলত খাদ্যপণ্য তৈরি ও বাণিজ্যিক যানবাহন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এবারই প্রথমবারের মতো তারা হোটেল ব্যবসায় শুরু করতে যাচ্ছে। এ জন্য কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং পর্যটন অঞ্চলে প্রতিষ্ঠানটি এক একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে।

ইফাদ মোটরসের এমডি তাসকিন আহমেদ জানান, সাবরাং পর্যটন অঞ্চলে তাঁরা তিন তারকা মানের হোটেল বানাতে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করবেন। ১০ তলাবিশিষ্ট এই হোটেলে ৩৭০টি কক্ষ থাকবে। এতে কর্মসংস্থান হবে তিন শতাধিক মানুষের। এর আগে ইফাদ গ্রুপ বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ১০ একর জমি পেয়েছিল।

ডার্ড গ্রুপের তিনটি কোম্পানি সাবরাং পর্যটন অঞ্চলে মোট পাঁচ একর জমি পেয়েছে। এই গ্রুপ বাংলাদেশে ১৯৮৪ সালে কার্যক্রম শুরু করে। পোশাক, বস্ত্র, প্রকৌশল, সফটওয়্যার ও কৃষির পর এবারে তারা হোটেল ব্যবসায়ে নেমেছে।

সাবরাংয়ে গ্রুপটির মালিকানাধীন ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল ও দীপ্ত গার্মেন্টস দুই একর করে এবং ডার্ড গার্মেন্টস এক একর জমিতে তিনটি প্লটে হোটেল, মোটেল, কটেজ ও রিসোর্ট স্থাপন করবে। এ জন্য গ্রুপটি প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করবে। সেখানে কর্মসংস্থান হবে ৭০০ মানুষের।

অনুষ্ঠানে ডার্ড গ্রুপের পরিচালক সেঁজুতি দৌলা জানান, পর্যটন খাতের বিকাশে তাঁদের কোম্পানি কাজ করতে চায়। সে জন্য পোশাক ও কৃষির পর এবার হোটেল, কটেজ ও রিসোর্ট বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ইস্ট ওয়েস্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসও সাবরাং পর্যটন অঞ্চলে জমি বরাদ্দ পেয়েছে, যা পরিমাণে এক একর। সেখানে তারা ২৭ লাখ ২০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করে হোটেল ও রিসোর্ট করবে। এতে ২০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৮ সালে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা শুরু করে।

ইস্ট ওয়েস্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুল হাসান অনুষ্ঠানে জানান, ৩৫ বছর ধরে তাঁরা অ্যাভিয়েশন খাতে কাজ করছেন।