এক প্যানেলের প্রার্থী আরেক প্যানেলে, নতুন জায়গায় ভোট
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) নির্বাচনে এবার প্রার্থীরা চারটি প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত সপ্তাহে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হলে দেখা যায়, এক প্যানেলের প্রার্থী অন্য প্যানেলে ভিড়েছেন। অন্যদিকে এক সপ্তাহ আগে এসে তৃতীয়বারের মতো ভোট গ্রহণের স্থান পরিবর্তন হচ্ছে।
প্রায় ১০ বছর পর এই বাণিজ্য সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট হচ্ছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণ হবে। ফলে শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। প্রার্থীরা ভোট চাইতে এখন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।
রিহ্যাবের নির্বাচন কেন্দ্র করে চারটি প্যানেলে হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জাপান গার্ডেন সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ওয়াহিদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ, সেঞ্চুরি রিয়্যালটির চেয়ারম্যান এম জি আর নাসির মজুমদারের নেতৃত্বে ডেভেলপারস ফোরাম, রিহ্যাবের সাবেক সহসভাপতি নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে নবজাগরণ প্যানেল এবং সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও হামিদ রিয়েল এস্টেট কনস্ট্রাকশনের এমডি ইন্তেখাবুল হামিদের নেতৃত্বে জয় ধারা নামে একটি প্যানেল হয়েছে। ইন্তেখাবুল হামিদ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ভাই।
চার প্যানেলের বাইরে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন—মাসুদ মনোয়ার, প্রদীপ কর্মকার, মো. এমদাদুল হোসেন, এ এস এম আবদুল গাফফার মিয়াজী প্রমুখ।
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, ঢাকার ২৬ পরিচালক পদের বিপরীতে প্রার্থী আছেন ৮৬ জন। আর চট্টগ্রামের তিনটি পরিচালক পদের বিপরীতে রয়েছেন সাতজন। তবে জয় ধারা ও আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ—এই দুটি প্যানেল সব কটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ডেভেলপারস ফোরাম ও নবজাগরণ প্যানেল যথাক্রমে ১০ ও ১৯ জন করে প্রার্থী দিয়েছে।
এক প্যানেলের প্রার্থী অন্য প্যানেলে
ওরিয়েন্টাল রিয়েল এস্টেটের এমডি রেজাউল করিম খান, আবেদন হোল্ডিংসের এমডি এ কে এম বরকতউল্লাহ, সাম্পান ডেভেলপমেন্টের এমডি ইমামুল হাসানসহ কয়েকজন প্রার্থী ডেভেলপারস ফোরাম প্যানেলের প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালিয়েছেন। গত সপ্তাহ থেকে তাঁদের জয় ধারা প্যানেলে প্রার্থী হিসেবে দেখা যাচ্ছে। আবার নব জাগরণ প্যানেলের কয়েকজন প্রার্থীও দলছুট হয়েছেন।
এ বিষয়ে ডেভেলপারস ফোরাম প্যানেলের নেতা এম জি আর নাসির মজুমদার গত মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্যানেলের ১৬ জন প্রার্থীকে চাপ দিয়ে কিংবা লোভ দেখিয়ে ভাগিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে গত মঙ্গলবার রাতে জয় ধারা প্যানেলের নেতা ইন্তেখাবুল হামিদকে মোবাইল ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি একই অভিযোগের বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, প্রার্থীদের যে কেউ যে কোনো প্যানেলে যুক্ত হতে পারেন।
রিহ্যাবের এই নির্বাচন গত বছরের সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তখন নির্বাচন কমিশন গঠন ও ভোটার তালিকায় অনিয়ম নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে নির্বাচন স্থগিত হয়। অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত হয় সংগঠনের সব ব্যাংক হিসাব। নভেম্বরের শেষ দিকে রিহ্যাবের তৎকালীন কমিটির বর্ধিত মেয়াদ স্থগিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উপসচিব জান্নাতুল ফেরদৌসকে প্রশাসক পদে বসায়। এরপর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও তফসিল ঘোষণা করা হয়।
এদিকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্ব চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেন সংগঠনের কয়েকজন সাবেক প্রভাবশালী নেতা। তারই অংশ হিসেবে প্রার্থীদের সঙ্গে ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে মতবিনিময় সভা করেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সভায় তিনি প্রার্থীর সংখ্যা কমিয়ে আনার পরামর্শ দেন।
ওই দিন সকালে নির্বাচনের তফসিল সংশোধন করে নির্বাচন বোর্ড। এতে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ভোটের তারিখ পিছিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি করা হয়। যদিও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা তার আগেই অর্থাৎ ৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছিল। অবশ্য পরে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হাসিদ চার প্যানেল নেতার সঙ্গে সভা করে বলে দেন, নির্বাচন হবে। কোনো সিলেকশন হবে না।
ভোটের ভেন্যু আবার পরিবর্তন
রিহ্যাবের নির্বাচনের ভোট গ্রহণের জন্য গত ৩০ জুন প্রথমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রকে (বিআইসিসি) নির্ধারণ করে নির্বাচন বোর্ড। পরে সেই ভেন্যু পরিবর্তন করে গুলশান শুটিং ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইন্তেখাবুল হামিদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আপত্তি ওঠে। পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি সেই ভেন্যুও পরিবর্তন করে খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে নিয়ে যায় নির্বাচন বোর্ড।
কেআইবি মিলনায়তনে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্তের পর আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ ও ডেভেলপারস ফোরাম—এই দুই প্যানেলের নেতারা নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রশাসককে জানান, এই ভেন্যুতে সুষ্ঠু ভোট করা সম্ভব না। নিরাপত্তাহীনতাও তৈরি হতে পারে। তাঁরা কোনো পাঁচ তারকা হোটেলকে ভেন্যু করার অনুরোধ জানান।
জানা যায়, শেষ পর্যন্ত হোটেল র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে ভোট গ্রহণ হতে পারে। কারণ, নির্বাচন বোর্ডের সদস্যরা ইতিমধ্যে হোটেলটি পরিদর্শন করেছেন।
রিহ্যাব নির্বাচন
২৭ ফেব্রুয়ারি এই বাণিজ্য সংগঠনের ভোট গ্রহণ হবে। এখন শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণা চলছে। প্রার্থীরা ভোট চাইতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।