পাহাড়ে ভ্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁবুর চাহিদা বাড়ছে
ঢাকা থেকে ৯ জনের একটি পর্যটক দল পাহাড়ে ট্রেকিং ও ক্যাম্পিং বা তাঁবুবাসের উদ্দেশ্যে গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার দুর্গম শামুক ঝিরির পাশের মেনকিউ পাড়ায় তিন রাত অবস্থান করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর দুর্গম পরিবেশের টানেই এমন জায়গায় তাদের এই ছুটে যাওয়া।
সেখানে প্রতিটি তাঁবুতে তিনজন করে থাকেন। এটি তাঁদের প্রথম অভিজ্ঞতা নয়; কয়েক মাস পরপরই তাঁরা পাহাড়ে এমন ক্যাম্পের আয়োজন করেন। দেশের পাহাড়ি এলাকায় এ ধরনের অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর সচরাচর পাহাড়ে ট্রেকিং ও ক্যাম্পিংয়ের আয়োজন করে। এ রকম ভ্রমণের প্রধান অনুষঙ্গ হলো তাঁবুতে রাতযাপন, যা ইদানীংকালের ভ্রমণপিপাসুদের বেশ পছন্দ। এসব তাঁবুর অধিকাংশই আমদানি করা, বিশেষ করে চীন থেকে। চাহিদা বাড়ায় এখন দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও তাঁবু উৎপাদনে যুক্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
দেশে তৈরি তাঁবু বাজারে আনছে রিগ্যাল ফার্নিচার। প্রতিষ্ঠানটি দুজন থেকে শুরু করে ১২ জন পর্যন্ত থাকতে পারবেন, এমন তাঁবুও তৈরি করছে। দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে এসব তাঁবু প্রদর্শন করা হলেও এখনো দেশের বাজারে বিক্রি শুরু করেনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি তিন দিনের এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে। সেখানে এসব তাঁবুর দেখা মেলে। রিগ্যালের একজন কর্মকর্তা জানান, তাঁরা এক বছর আগে তাঁবু উৎপাদন শুরু করেন। তাঁদের নরসিংদীর ঘোড়াশালে অবস্থিত কারখানায় এসব তাঁবু তৈরি হচ্ছে। চীনের ওপর মার্কিন শুল্কারোপের কারণে দেশ থেকে এখন তাঁবু রপ্তানি বাড়ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
রিগ্যালের জ্যেষ্ঠ অপারেশন ম্যানেজার এমদাদুল হক প্রথম আলোকে জানান, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে তাঁদের তাঁবু রপ্তানি হচ্ছে। এসব বাজারে তাঁবুর চাহিদাও ভালো। তবে এবার দেশের ক্রেতাদের জন্য বেস্টবাইয়ের শোরুমে এসব তাঁবু রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মূলত পাহাড়ে ক্যাম্পিং করতে যাওয়া পর্যটকদের লক্ষ্য করেই প্রথমবারের মতো দেশের বাজারে তাঁবু আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দামের বিষয়ে এমদাদুল হক বলেন, এখনো দাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুজনের একটি তাঁবুর দাম আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা হতে পারে। বড় তাঁবুর দাম পড়তে পারে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। তাঁবুর পাশাপাশি দেড় হাজার টাকা দামের ফোল্ডিং চেয়ারও ছাড়বে রিগ্যাল। এ ছাড়া পানি গরম করা কিংবা রান্নার চিলারও থাকবে। নতুন বছরে দেশের বাজারে এসব পণ্য আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বান্দরবানের আলীকদমে ৯ জনের দলটির ক্যাম্পিংয়ের আয়োজন করেছিলেন আসাদ মিয়া। তিনি ইউনিমার্ট থেকে যুক্তরাজ্যের তৈরি তাঁবু কিনেছিলেন, যার দাম পড়েছিল পাঁচ হাজার টাকা। এর আগে তিনি প্রতিদিন ৩০০ টাকায় তাঁবু ভাড়া নিতেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, দেশে তাঁবু তৈরি হলে হয়তো দাম কম পড়ত। পাশাপাশি ভালো মানের তাঁবু পাওয়া যেত। ভারতে নানা ধরনের তাঁবু পাওয়া গেলেও দেশে তা সীমিত, বিচ্ছিন্নভাবে খেলার সামগ্রীর দোকানেই কেবল বিক্রি হয়।
দেশে তাঁবু বিক্রির জন্য আলাদা কোনো বাজার বা ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। তবে বিভিন্ন খেলার দোকান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গ্রুপ ও অনলাইন পেজে তাঁবু বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে নভেম্বর মাসে সেমস গ্লোবালের এক প্রদর্শনীতেও তাঁবুর জন্য শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পোর্টেবল এসি প্রদর্শন করে এসিআই। এতে ৫ থেকে ১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় তাঁবুর ভেতরের পরিবেশ ঠান্ডা বা গরম রাখা যাবে। দেড় ঘণ্টার চার্জে টানা আট ঘণ্টা ব্যবহার করা সম্ভব। তবে পণ্যটি এখনো বাজারে আসেনি। ফলে দামের তথ্য জানাতে পারেননি এসিআইয়ের নির্বাহী নাবিল মোর্শেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চীনে পণ্যটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চায়না ইকো ফ্লো কোম্পানির একক পরিবেশক হিসেবে দেশের বাজারে চাহিদা যাচাইয়ের জন্য সেমসের প্রদর্শনীতে ১৫ কেজি ওজনের যন্ত্রটি আনা হয়েছিল।