বকেয়ার জেরে চামড়া কেনা নিয়ে সংশয়ে নওগাঁর ব্যবসায়ীরা

চামড়াশিল্পকে রক্ষায় জেলাভিত্তিক ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়াসহ সরকারের নজরদারি বাড়ানোর দাবি করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

● ট্যানারিমালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

● সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও ট্যানারিমালিকেরা সে দামে কেনেন না।

● লোকসান ঠেকাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা খুচরা পর্যায়ে কম দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হন।

আড়তে আনা চামড়া নামানো হচ্ছে ভ্যান থেকেফাইল ছবি

ট্যানারিরমালিক ও আড়তদারদের কাছে প্রায় ১২ কোটি টাকা পাওনা আছে নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীদের। বিপুল অঙ্কের টাকা আটকে থাকায় এবার কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা নিয়ে সংশয়ে আছেন তাঁরা। এ ছাড়া চামড়া সংরক্ষণের মূল উপকরণ লবণের মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও আছে দুশ্চিন্তা।

স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা বলেন, কোরবানির সময় নাটোরের আড়তে লবণ দেওয়া চামড়া বিক্রি করেন নওগাঁসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর ব্যবসায়ীরা। অনেকে ঢাকার ট্যানারিগুলোতেও বিক্রি করেন। গত দুই বছরে ট্যানারিমালিক ও আড়তদারেরা কিছু পাওনা পরিশোধ করলেও এখনো নওগাঁর ব্যবসায়ীদের পাওনা আছে অন্তত ১২ কোটি টাকা। এ ছাড়া চামড়া সংরক্ষণের প্রধান উপকরণ লবণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে। চামড়াশিল্পকে রক্ষা করতে জেলাভিত্তিক চামড়া ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়াসহ সরকারের নজরদারি বাড়ানোর দাবি করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

সরকার এ বছর চামড়ার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। খাসির কাঁচা চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলার চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা যায়, প্রতি মৌসুমে নওগাঁয় চামড়া লবণজাত করতে প্রয়োজন হয় অন্তত ৩৫০ মেট্রিক টন লবণ, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৭৪ লাখ টাকা। বকেয়া টাকার পাশাপাশি সম্প্রতি নওগাঁয় লবণের মূল্যবৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। চামড়া সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) লবণের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। বর্তমানে প্রতি বস্তা মোটা লবণের দাম ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা। এতে চামড়া সংরক্ষণের খরচ বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

নওগাঁ শহরের গোস্তহাটির মোড় এলাকায় নওগাঁ-দুবলহাটি সড়কের দুই পাশে আছে ১৫টি চামড়ার আড়ত। ঈদের দিন থেকেই এসব আড়ত ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠবে। ঈদের আগে তাই গুদাম সংস্কারে ব্যস্ত সময় পার করেছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ১৫০ জন চামড়া ব্যবসায়ী আছেন। ট্যানারিমালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন এসব ব্যবসায়ী। সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও ট্যানারিমালিকেরা সে দামে চামড়া কেনেন না। এই পরিস্থিতিতে লোকসান ঠেকাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা খুচরা পর্যায়ে কম দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হন। উল্টো বছরের পর বছর ধরে ট্যানারিমালিকেরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনে টাকা বকেয়া রাখছেন। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীদের প্রায় ১২ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা আছে ট্যানারিমালিকদের কাছে। বকেয়া টাকা না পেয়ে অনেক ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।

জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন খান বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে ঢাকায় ট্যানারিমালিকের কাছে তাঁর প্রায় ১২ লাখ টাকা বকেয়া ছিল। কয়েক দিন আগে দুই ট্যানারিমালিক তিন লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। কোরবানির সময় ধারদেনা করে চামড়া কিনতে হয়। কিন্তু ধারের টাকা আমরা পরিশোধ করতে পারি না। অন্যদিকে ট্যানারিমালিকেরাও আমাদের টাকা আটকে রাখেন। এভাবে আসলে ব্যবসা চলে না।’

নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি মোমতাজ হোসেন বলেন, গত বছর জেলায় গরু ও ছাগলসহ প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার পিস চামড়া প্রস্তুত করা হয়েছিল, যার বাজারদর ছিল প্রায় ছয় কোটি টাকা। এ বছরও একই পরিমাণ চামড়া কিনে প্রস্তুত করা হবে।