হস্তশিল্প পণ্য হতে পারে বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি খাত

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্টের (সিইডি) যৌথভাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশি হস্তশিল্প পণ্য: রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক বাজারের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে অতিথিরা। আজ বুধবার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়েছবি: প্রথম আলো

বিশ্বে হস্তশিল্প পণ্যের বাজার এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। অথচ বাংলাদেশ থেকে এ খাতে মাত্র ৩৮০ মিলিয়ন বা ৩৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এসব পণ্যের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৩২ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারের।

আজ বুধবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্টের (সিইডি) যৌথভাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশি হস্তশিল্প পণ্য: রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক বাজারের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে এমন মত দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা ও অর্থায়ন নিশ্চিত করা গেলে হস্তশিল্প হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের রপ্তানি খাত।

বাংলাদেশ থেকে হস্তশিল্প খাত থেকে প্রধানত পাটজাতীয় কার্পেট পণ্য, ধাতব পণ্য, পাথরের ও বাঁশ-বেতের বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক আরশাদ মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইপিবির পরিচালক আবু মোখলেছ আলমগীর হোসেন।

আমাদের ভালো উদ্যোক্তা বেশি নেই। অনেকে ভালো পণ্য থাকার পরও তা নিয়ে সামনে আগাতে পারছেন না। কারণ, যোগাযোগের ঘাটতি রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য অনলাইনে সক্রিয় থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
—বেলাল হোসেন, সভাপতি, বাংলাদেশ হস্তশিল্প প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বাংলাক্রাফট)

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ বলেন, ‘সমস্যা জয় করেই উদ্যোক্তা হতে হয়। সমস্যার ভেতর দিয়েই এগোতে হবে। হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানিতে আমরা আগে ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিতাম। তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর তা আর দেওয়া যাবে না। তাই প্রণোদনা কমিয়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে প্রণোদনা সমন্বয় নিয়ে সামনে আরও কাজ করার আছে।’

সরকারি সহায়তায় বিদেশি মেলায় অংশগ্রহণ সম্পর্কে মো. হাসান আরিফ বলেন, ‘ভিয়েতনাম, চীন কিংবা ভারতের উদ্যোক্তারা সরকারি সহায়তায় বিদেশের মেলায় যান না। এটা কতটা কাজে লাগছে—তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। তাই আমরা বিদেশি ক্রেতাদের দেশে এনে সোর্সিং ফেয়ার করছি। আবার মেলায় যাওয়ার আগে প্রশিক্ষণ দেওয়ারও চিন্তা করছি আমরা। আর উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ক্রেতাদের যোগাযোগ রক্ষায় একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম করব আমরা।’

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক চাহিদার মাত্র ১ দশমিক ১৮ শতাংশ পণ্য রপ্তানি করে থাকে। তবে যথাযথ নীতি-সহায়তা পেলে এ খাত থেকে বছরে এক বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব। সে জন্য বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা ও অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

প্রবন্ধে আবু মোখলেছ আলমগীর হোসেন বলেন, বিশ্বে পরিবেশবান্ধব পণ্যের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। তাই ২০৩২ সাল নাগাদ হস্তশিল্প পণ্যের বাজার ২ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাই ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরি করতে হবে। সে জন্য ভারত ও চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এ ছাড়া নকশায় আধুনিকায়ন ও দক্ষ জনশক্তি বাড়ানোয় জোর দিতে হবে।

বাংলাদেশ হস্তশিল্প প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বাংলাক্রাফট) সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের ভালো উদ্যোক্তা বেশি নেই। অনেকে ভালো পণ্য থাকার পরও তা নিয়ে সামনে আগাতে পারছেন না। কারণ, যোগাযোগের ঘাটতি রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য অনলাইনে সক্রিয় থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

এই খাতের টিকে থাকার জন্য আগের মতো ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনার দাবি জানান বাংলাক্রাফটের সভাপতি।

কম সুদে ঋণের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার তহবিল রয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাফিজর রহমান। তিনি বলেন, ‘৫ থেকে ৭ শতাংশ সুদে এই তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে হস্তশিল্পের ১০টি ক্লাস্টারে ৬ মাসের মধ্যে সব ধরনের অর্থায়ন দেওয়ার জন্য আমরা কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেব।’

এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, গবেষক ও সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর কথা বলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজিম হাসান সাত্তার। তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে চাই। বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা বের করার জন্যও আমরা চেষ্টা করছি।’

বিসিকের ৮৩টি শিল্পনগরে ৬ লাখ মানুষ কাজ করছে বলে জানান সংস্থাটির প্রধান নকশাবিদ মো. রাহাত উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব ডিজাইন সেন্টার আছে। সেখানে আমরা নকশা নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। তা ছাড়া বিভিন্ন নগর মেলার আয়োজন করি আমরা।’

পাট নিয়ে কাজ করতে গিয়ে পাঁচটি দপ্তরে যেতে হয় বলে জানান বাংলাদেশ পাটজাত পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিজেজিইএ) উপদেষ্টা শাহেদুল ইসলাম হেলাল। তিনি বলেন, এত অনুমতি নিতে গিয়ে সময় চলে যায়। অনলাইনে পণ্য মেলা আয়োজনেরও প্রস্তাব দেন তিনি।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের সহকারী অধ্যাপক নুসরাত হাফিজ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের হেড অব সিইডি আফসানা চৌধুরী প্রমুখ।