গাড়ি কিনতে চান, কোনটি কিনবেন

সূত্র: রয়টার্স

গাড়ি কেনার আগে চিন্তা করা উচিত ঠিক কী প্রয়োজনে আপনি গাড়িটির মালিক হতে চাইছেন? কথায় আছে, গাড়ি পোষা আর হাতি পোষা সমান। তবে বুঝে–শুনে গাড়ি কিনলে তা হাতি না হয়ে শখের ঘোড়াও হতে পারে।

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গাড়ি বিলাসবহুল। বছর বছর গাড়ি বদলান এমন মানুষের সংখ্যা নগণ্য। তাই দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহারের কথা চিন্তা করে গাড়ি কেনা উচিত।

যদি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বা ছোট পরিবারের জন্য গাড়ি দরকার হয় সে ক্ষেত্রে সেডান, হ্যাচব্যাক, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি), ক্রসওভার ইউটিলিটি ভেহিকেল (সিইউভি) হতে পারে আপনার অন্যতম পছন্দ। দূরের পথে নিরাপদে যাত্রা, ভাঙাচোরা সড়কে চলাচল করতে হলে এসইউভি কেনাটাই হতে পারে ভালো সিদ্ধান্ত। তবে এসইউভির দাম বেশি। সে ক্ষেত্রে ক্রসওভার নিতে পারেন। দাম এসইউভির চেয়ে কম হবে এবং জ্বালানি খরচও ততটা হবে না।

শহরের ভেতরে চলাচল, অফিসে আসা–যাওয়া, সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠানোর জন্য সেডান কারই যথেষ্ট। বাজারে সেডান কারের দামই সবচেয়ে কম। আর জ্বালানিসাশ্রয়ী।

পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেশি হলে মাল্টিপারপাস ভেহিকেল (এমপিভি) অথবা মিনিভ্যান (মাইক্রোবাস নামে পরিচিত) হতে পারে সেরা পছন্দ। করপোরেট অথবা অফিসের প্রয়োজনে মিনিভ্যান বেশ জনপ্রিয়। মিনিভ্যানগুলোর মূল্যও এমপিভির কাছাকাছি বা এমপিভি থেকে মডেল ভেদে কমবেশি হয়ে থাকে। আর গতির সঙ্গে যদি সখ্য থাকে তাহলে স্পোর্টস বা কনভার্টেবল গাড়ি হতে পারে আপনার শখের বাহন।

প্রথমবার কেনার ক্ষেত্রে নতুন গাড়ির চেয়ে অনেকে পুরোনো গাড়িকে (রিকন্ডিশন্ড) এগিয়ে রাখেন। বাংলাদেশে জাপানি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পুরোনো গাড়ি জনপ্রিয়। তবে পুরোনো গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে গাড়িটির নিলাম বা পরিদর্শন শিট, মাইলেজ, পরিস্থিতি, ব্যবহারের বয়সকাল ইত্যাদি খেয়াল রাখুন। এখন অবশ্য গাড়ি ক্রেতারা নতুন গাড়ি কেনা বাড়িয়েছেন।

নিজের বাজেটের সঙ্গে মিলিয়ে ভালো গাড়ি কিনতে সঠিক বিপণনকেন্দ্র অথবা বিশ্বাসযোগ্য বিক্রেতাকে বেছে নিন। এ ক্ষেত্রে বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদানের বিষয়টিও স্বচ্ছভাবে জেনে নিতে হবে। বাসার পার্কিং বা যেখানে গাড়ি রাখবেন সেই স্থানটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। ছোট গাড়ি হলে সহজেই পার্ক করা যায়। বড় গাড়ির ক্ষেত্রে বেশি জায়গা এবং সুপরিসর পার্কিংয়ের প্রয়োজন হয়।

সূত্র: রয়টার্স

গাড়ি কেনার সময় জ্বালানির ধরনও মাথায় রাখুন। কারণ, গাড়ির চাকা ঘুরলেই জ্বালানির খরচ বাড়তে থাকে। দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া বেশির ভাগ গাড়ির জ্বালানি পেট্রল বা অকটেন। ডিজেলচালিত গাড়িও রয়েছে। রয়েছে হাইব্রিড, প্লাগ ইন হাইব্রিড অথবা বৈদ্যুতিক গাড়ি। যেসব গাড়ি জ্বালানি শক্তির পাশাপাশি বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহার করে চালানো যায়, সেসব গাড়িকে হাইব্রিড গাড়ি বলে। দেশে হাইব্রিড গাড়ির জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

বিকল্প জ্বালানি হিসেবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) এবং তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) জনপ্রিয়। সিএনজি তুলনামূলক সস্তা, গাড়ির ইঞ্জিনের ওপর বাড়তি চাপ ফেলে। এলপিজি সিএনজির চেয়ে কম ক্ষতিকর।

সেডান

দেশের রাস্তায় সেডান কারই বেশি চলাচল করে। মানুষ চেনে প্রাইভেট কার নামে। সেডান কারের বৈশিষ্ট্য হলো এসব গাড়ির ইঞ্জিন সামনে থাকে এবং বসার জন্য দুই সারি আসন ও মালামাল বহন করার জন্য পেছনের অংশে আলাদা জায়গা থাকে। এসব গাড়ির পেছনের কাচটি সিটের কাছাকাছি মিলিত হয়। সেডান কারের গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স কম হয়, অর্থাৎ গাড়ির কাঠামো মাটি থেকে খুব বেশি উঁচুতে হয় না। সেডান কারের আরেকটি নাম হলো সেলুন কার।

হ্যাচব্যাক

সেডান কারের ধরনে যেসব গাড়ির পেছনের গ্লাস সরাসরি গাড়ির কাঠামোর (বডি) শেষ অংশে মিলিত হয় সেসব গাড়িকে হ্যাচব্যাক বলা হয়। হ্যাচব্যাক গাড়িগুলোতে মালামাল রাখার জায়গা আর পেছনের আসনের মধ্যে কোনো দেয়াল থাকে না।

ক্রসওভার

সেডান ও স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেলের (এসইউভি) মাঝামাঝি ধরন ও কাঠামোর গাড়িগুলোকে ক্রসওভার ইউটিলিটি ভেহিকেল (সিইউভি) বলা হয়। এসব গাড়ি সাধারণত সেডান কারের চেয়ে উঁচু, এসইউভির তুলনায় নিচু হয়। হ্যাচবেকের সঙ্গেও এই গাড়ির মিল রয়েছে। মিতসুবিশি ইকলিপস ক্রস, এমজি জেডএস, এইচএস হাভাল জলিয়ন, টয়োটা হ্যারিয়ার, হোন্ডা ভেজেল, অওডি কিউটু, নিশান জুকসহ বেশ কয়েকটি ক্রসওভার দেশের গাড়ির বাজারে জনপ্রিয়।

এসইউভি বা এসএভি

বাংলাদেশের মানুষ জিপ নামে যেসব গাড়িকে চেনে সেসব গাড়ির প্রকৃত নাম স্পোর্ট ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি)। এই গাড়ির চাকার আকার বড় হয়। গাড়ির কাঠামো মাটি থেকে বেশ উঁচু হয়, অর্থাৎ গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স বেশি থাকে। এসইউভির ইঞ্জিন ক্ষমতা (সিসি) বেশি হয়। ভাঙাচোরা রাস্তায়, দূরের পথে চলাচলে এসব গাড়ি উপযোগী। তুলনামূলক নিরাপদ যাত্রার জন্য এসইউভি সারা পৃথিবীতেই সুনাম কুড়িয়েছে। অনেকে এই গাড়িগুলোকে বিগ ড্যাডি বলেও সম্বোধন করে। জার্মানি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের তৈরি এই শ্রেণির গাড়িগুলোকে স্পোর্টস অ্যাকটিভিটি ভেহিকেলও (এসএভি) নামে ডাকে।

এমপিভি বা এমইউভি

পাঁচজনের বেশি কিন্তু আটজনের কম যাত্রী বহন করতে পারে এমন গাড়িগুলোকে মাল্টিপারপাস ভেহিকেল (এমপিভি) বা মাল্টি ইউটিলিটি ভেহিকেল (এমইউভি) বলে। এই গাড়ি দেখতে হ্যাচবেক গাড়ির মতো এবং আকারে লম্বা ও উঁচু। বড় পরিবার অথবা যাত্রীর পাশাপাশি মালামাল বহন করার জন্য এই গাড়ি জনপ্রিয়।

মিনিভ্যান

এমপিভি শ্রেণির মধ্যে মিনিভ্যান গাড়িও অন্তর্ভুক্ত। ভ্যানের তুলনায় ছোট কিন্তু যাত্রীর পাশাপাশি মোটামুটি মালামাল বহন করতে পারে, এমন গাড়িকে সাধারণত মিনিভ্যান বলা হয়। বাংলাদেশে গাড়িগুলো মাইক্রোবাস নামে পরিচিত।

অফ রোডার

এসইউভির মধ্যে যে গাড়িগুলোতে মাটি আঁকড়ে ধরার মতো চাকা এবং চাকায় খাঁজকাটা থাকে, সেসব গাড়ি অফ রোডার বলে। এই গাড়ি পাহাড়ি রাস্তা, কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল পথ অথবা অল্প পানির মধ্য দিয়ে দাপটের সঙ্গে চলতে সক্ষম। অফ রোডারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ফোর হুইল বা অল হুইল ড্রাইভ। এতে চারটি চাকা সমান শক্তিতে গাড়িকে এগিয়ে নিতে পারে।

স্পোর্টস কার

সেডান ঘরানার মধ্যে উচ্চগতিসম্পন্ন গাড়িগুলোকে স্পোর্টস কার বলে। এই গাড়িগুলো নিচু হয়, অর্থাৎ গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স খুবই কম হয়। স্পোর্টস কারের চাকাগুলোর সঙ্গে গাড়ির শরীর লেগে থাকে। গাড়ির পেছনে বুটের ওপরে স্পয়লার লাগানো থাকে। বাতাসকে কাটিয়ে গতি তুলতে সাহায্য করে গাড়িকে মাটির সঙ্গে সেঁটে ধরতে স্পয়লার ব্যবহৃত হয়। সাধারণত স্পোর্টস কার দুই আসনবিশিষ্ট হয়ে থাকে।

কনভার্টেবল

গাড়িতে বসে আকাশ দেখা অথবা গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরতে চাইলে প্রিয় সঙ্গী হতে পারে কনভার্টেবল গাড়ি। এ শ্রেণির গাড়িতে ছাদ ভাঁজ (ফোল্ড) করে গাড়ির পেছনের অংশে স্তূপ করে রাখা যায়। আবার বৃষ্টি বা চড়া রোদে ছাদটি ঢেকে দেওয়া যায়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) চালানোর সময়ও ছাদ ঢেকে দেওয়া যায়।

বাণিজ্যিক গাড়ি

বেশি যাত্রী বহনের জন্য যেসব গাড়ি ব্যবহৃত হয়, সেসব গাড়ি কমার্শিয়াল বা বাণিজ্যিক গাড়ি হিসেবে পরিচিত। ১০ থেকে ১৬ জন পর্যন্ত যাত্রী এই গাড়িতে বহন করা যায়। এসব গাড়ি মিনিভ্যান শ্রেণির গাড়ির চেয়ে লম্বা হয়ে থাকে। গাড়ির ইঞ্জিন রাখার জায়গা বেশ ছোট হয়। অনেকে মিলে ঘুরতে যাওয়ার জন্য এ ধরনের গাড়ি বেশি ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে টয়োটা হাইয়েস এই শ্রেণির গাড়ির মধ্যে অন্যতম।