ভোটের লড়াইয়ে দ্বিতীয় প্রজন্মের সংখ্যা বাড়ছে

আগামীকাল শনিবার ঢাকা ও চট্টগ্রামে ভোট গ্রহণ হবে। ৩৫ পরিচালক নির্বাচনে ভোট দেবেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২ হাজার ৪৯৬ জন ভোটার।

বিজিএমইএ

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতৃত্বে আসার জন্য দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়ছে। এ রকম ১৪ জন সংগঠনটির গত পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এবার সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০। তাঁরা সংগঠনটির নির্বাচনকেন্দ্রিক দুই প্যানেল—সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের হয়ে নির্বাচন করছেন।

বিজিএমইএর ঢাকা ও চট্টগ্রাম কার্যালয়ে আগামীকাল শনিবার সংগঠনের ২০২৪-২৬ সাল মেয়াদি পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে। সংগঠনের ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩৫টি পরিচালক পদে সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের ৭০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবার মোট ভোটার ২ হাজার ৪৯৬ জন। এর মধ্যে ঢাকার ভোটার ২ হাজার ৩২ ও চট্টগ্রামের ৪৬৪ জন। সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার বা দলনেতা এস এম মান্নান। তিনি বর্তমানে বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। আর ফোরামের প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ। তিনি বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি।

এখন সবকিছু নির্বাচন বোর্ডের ওপর নির্ভর করছে। তারা যদি গাইডলাইন অনুযায়ী ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করে, তাহলে কোনো গন্ডগোল হবে না। তা ছাড়া ভোট গণনা ডিজিটাল পদ্ধতিতে হবে।
ফয়সাল সামাদ, দলনেতা, ফোরাম

দেশের অধিকাংশ বাণিজ্য সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট হয়। তার মধ্যে হাতে গোনা যে কয়টা সংগঠনে ভোট হয়, তার মধ্যে অন্যতম বিজিএমইএ। মাঝেমধ্যে অবশ্য এর ব্যত্যয়ও ঘটে। সে ক্ষেত্রে সমঝোতার মাধ্যমে পর্ষদ গঠিত হয়। ২০১৩ সালে সদস্যদের সরাসরি ভোটে বিজিএমইএর পর্ষদ নির্বাচিত হয়। পরের বার সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম দুই মেয়াদের জন্য সমঝোতা করে। গত ২০২১ সালের নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদ ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩৫ পরিচালক পদের মধ্যে ২৪টিতে বিজয়ী হয়। আর ফোরাম ১১ পরিচালক পদে জয় লাভ করে। তখন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানের নেতৃত্বে দুই বছরের জন্য পর্ষদ গঠিত হয়। তবে এক বছর সময় বাড়িয়ে নেয় বর্তমান পর্ষদ। সে জন্য এক বছর পর এখন ভোট হচ্ছে।

এবারের নির্বাচনে দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যবসায়ীদের একজন দেশ গার্মেন্টসের পরিচালক ভিদিয়া অমৃত খান। তিনি গত শতকের আশির দশকে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরুর দিককার উদ্যোক্তা এম নুরুল কাদেরের কন্যা। নুরুল কাদের চট্টগ্রামে দেশ গার্মেন্টস গড়ে তুলেছিলেন। ভিদিয়া অমৃত খানের মতো দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যবসায়ী এবিএম ফ্যাশন লিমিটেডের এম সাজেদুল করিম, ড্রেসম্যানের মাশিদ রুম্মান আবদুল্লাহ, এনভয় ডিজাইনের শেহরীন সালাম, ইভিটেক্স ড্রেস শার্টের শাহ রাঈদ চৌধুরী, ফ্যাশন ডট কমের খান মনিরুল আলম, ফোর ব্রাদার্স ফ্যাশনের সামিহা আজিম, নিউ এজ গ্রুপের আসিফ ইব্রাহিম, লায়লা স্টাইলের ইমরানুর রহমান, বিটপি গ্রুপের মিরান আলী, মমসন সার্ভিস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নূসরাত বারী, প্যান্টালুন ফ্যাশনের রুমানা রশীদ, পশ গার্মেন্টসের ওয়াসিম জাকারিয়া, সায়েম ফ্যাশনের আবরার হোসেন, সাঙ্গু টেক্সের মাহের মান্নান, শাশা গার্মেন্টসের শামস মাহমুদ, স্প্যারো গ্রুপের শোভন ইসলাম, আর্জেন্টা গার্মেন্টসের মোহাম্মদ রাকিব আল নাসের, এইচকেসি অ্যাপারেলসের রাকিবুল আলম চৌধুরী, কেডিএস গ্রুপের সেলিম রহমান এবং আরডিএম অ্যাপারেলসের মোস্তফা সারোয়ার নির্বাচন করছেন।

নির্বাচন নিয়ে সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার এস এম মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তরুণ ও অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে ভারসাম্যপূর্ণ একটি প্যানেল গঠন করেছি। তরুণেরা সফল ব্যবসায়ী। একই সঙ্গে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বিজিএমইএতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন। ফলে আগামী দিনে তাঁরা পোশাকশিল্পকে এগিয়ে নিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে। আশা করি, ভোট নিয়ে বিজিএমইএর দুর্নাম হবে না।’

এবারের নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে উত্তাপ ছড়িয়েছে। গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ২ হাজার ৫৬৩ জনের প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর ৪২৯ জনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আপিল বোর্ডে আবেদন করেন ফোরামের প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ। তিনি অভিযোগ করেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওয়েবসাইট তল্লাশি করে দেখা গেছে, এই ভোটারদের আয়কর প্রদানের হালনাগাদ তথ্য নেই। পরে বিষয়টি নিয়ে আপিল বোর্ড শুনানি করে। তাতে ৬৭ জন ভোটার বাদ পড়েন। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য এফবিসিসিআই আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন ফয়সাল সামাদ। পরে তিনি উচ্চ আদালতেও যান।

ভোট সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে। আশা করি, ভোট নিয়ে বিজিএমইএর দুর্নাম হবে না।—এস এম মান্নান, দলনেতা, সম্মিলিত পরিষদ।
ফয়সাল সামাদ, দলনেতা, ফোরাম

জানতে চাইলে ফয়সাল সামাদ গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিজিএমইএর সদস্যরা নেতৃত্বে পরিবর্তন চান। সে জন্য তাঁরা ভোট দিতে মুখিয়ে আছেন। আমরা পোশাকশিল্পের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তরুণ ও অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে প্যানেল গঠন করেছি।’ ভোট সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এখন সবকিছু নির্বাচন বোর্ডের ওপর নির্ভর করছে। তারা যদি গাইডলাইন অনুযায়ী ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করে, তাহলে কোনো গন্ডগোল হবে না। তা ছাড়া ভোট গণনা ডিজিটাল পদ্ধতিতে হবে। সেখানে যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে, সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচনী বোর্ডের।