পাটপণ্যে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কের মেয়াদ আরও ৫ বছর বাড়িয়েছে ভারত

বহুমুখী পাটপণ্য
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ থেকে পাটপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কারোপের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়িয়েছে ভারত। গত শুক্রবার নতুন করে এ শুল্কারোপের মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন ঘোষণায় ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পাটপণ্যে ভিন্ন ভিন্ন হারে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। প্রতি টনে ৬ ডলার থেকে ৩৫২ ডলার পর্যন্ত অ্যান্টিং ডাম্পিং শুল্ক বসানো হয়েছে।

ভারতের এ সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের বেসরকারি পাটকলমালিকেরা। তাঁরা বলছেন, নতুন করে এ সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাটপণ্য রপ্তানিতে আবারও সংকট দেখা দেবে। এতে নতুন করে আরও কিছু পাটকল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, নতুন করে ভারত অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কের মেয়াদ বাড়ানোর কারণে এ দেশের পাটপণ্য রপ্তানি বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে। এমনিতেই পাঁচ বছর ধরে এ শুল্কারোপের কারণে ভারতে রপ্তানি কমছিল। এখন নতুন করে মেয়াদ বাড়ায় আমরা বাজারটি পুরোপুরি হারাব।

মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী আরও বলেন, আমাদের পাটপণ্য রপ্তানি হয় মূলত ভারত, চীন ও তুরস্কে। ২০১৭ সাল থেকে ভারত অ্যান্টিং ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করায় চীন ও তুরস্ক সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পাটপণ্যের দাম কমিয়ে দিয়েছে। তাতে বাজার ধরে রাখতে অসম এক প্রতিযোগিতা চলছে এ দেশের পাটপণ্য রপ্তানিকারকদের মধ্যে। ফলে অনেক পাটকল বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক এক সম্পর্কের কারণে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কারোপের বিরুদ্ধে আপিলও করা হচ্ছে না। আবার ভারতে কাঁচা পাট রপ্তানিও বন্ধ করা যাচ্ছে না। ফলে দেখা যাচ্ছে, আমাদের কাছ থেকে কোনো বাধা ছাড়া কাঁচা পাট নিয়ে তারা ভালো ব্যবসা করছে। অথচ আমরা মার খাচ্ছি।

উৎপাদন মূল্যের তুলনায় কম দামে বাংলাদেশের পাটকলমালিকেরা ভারতে পাটপণ্য রপ্তানি করছেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো ভারত সরকার অ্যান্টিং ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে। ওই সময় প্রতি টন পাটপণ্য রপ্তানিতে ১৯ থেকে ৩৫২ ডলার পর্যন্ত শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা তখন থেকে বলে আসছিলেন, ভারতের এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। কারণ, বেসরকারি পাটকলমালিকেরা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে পণ্য রপ্তানি করে লোকসান গুনতে পারেন না।

রপ্তানির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পাটপণ্যের ৬০ শতাংশই যায় ভারতে। ২০১৭ সাল থেকে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের পর থেকে রপ্তানি কমতে শুরু করে। এতে অনেক বেসরকারি পাটকল বন্ধ হয়ে যায়।

সম্প্রতি ভারত ও বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে পাটপণ্য রপ্তানির ওপর থেকে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য ভারতের প্রতি অনুরোধ জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ওই বৈঠক শেষে দেশে ফিরে এক সংবাদ সম্মেলনে টিপু মুনশি বলেছিলেন, এটি আর বহাল না রাখার জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।