শিল্পস্থাপনে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি চট্টগ্রাম অঞ্চলে

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

দেশের আট বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে শিল্প স্থাপনের জন্য সবচেয়ে বেশি আগ্রহী দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, সমুদ্রবন্দরের সুবিধা ও ভালো সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা কথা। এ ছাড়া বর্তমানে দেশে বিনিয়োগের জন্য ৯৯ হাজার একর জমির চাহিদা রয়েছে। আগামী এক দশকে এই চাহিদা দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পাবে।

দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা ও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নিয়ে করা একটি বাজার সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কার্যালয়ে এক কর্মশালায় বিভিন্ন অংশীজনের সামনে সমীক্ষাটির খসড়া তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন।

অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা তৈরির কাজ করছে বেজা। এর অংশ হিসেবে যৌথভাবে এই বাজার সমীক্ষার কাজ করছে ডেলয়েট ও ডিডিসি নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। সমীক্ষাটি করতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী, সরকারি সংস্থা ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিসহ মোট ১০০ জনের মতামত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিদ্যমান উৎস থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে।

বাজার সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৭৫ শতাংশ বিনিয়োগকারী চট্টগ্রাম অঞ্চলকে শিল্প স্থাপনের জন্য সবচেয়ে বেশি পছন্দ করছেন। এরপর ঢাকা (১৭ শতাংশ), খুলনা (৮ শতাংশ), বরিশাল (৮ শতাংশ) অঞ্চলকে তুলনামূলক বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন তাঁরা। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পদ্মা সেতু, মোংলা ও পায়রা বন্দরের মতো স্থাপনা তাদের এ আগ্রহ বৃদ্ধির কারণ।

কর্মশালায় বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, আমরা অনেক জমি পেয়েছি, যেগুলো অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য উপযোগী নয়। তবে চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এই সুযোগ–সুবিধা অনেক বেশি। এ কারণে এসব অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা বেশি আগ্রহ দেখান।

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর
প্রথম আলো ফাইল ছবি

দেশে প্রতিবছর বিনিয়োগের জন্য জমির চাহিদা বাড়ছে। বেজার সমীক্ষাতেও  বিষয়টি উঠে এসেছে। সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিনিয়োগের জন্য সারা দেশে প্রায় ৯৯ হাজার একর জমির চাহিদা রয়েছে। ২০৩২ সালে এই চাহিদা বেড়ে ২ লাখ ৬ হাজার একরে পৌঁছাতে পারে। তবে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে চট্টগ্রাম সবচেয়ে এগিয়ে থাকলেও জমির জন্য আবার বেশি চাহিদা রয়েছে ঢাকা অঞ্চলে। এরপর চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রাজশাহীর অবস্থান।

তবে অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্পস্থাপনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৯২ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা ভবিষ্যতে কোনো সময়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে চান। আর ৬৯ শতাংশ বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।

আগামী এক দশকে ২০টি প্রধান শিল্প খাতে কর্মসংস্থান কতটা বাড়তে পারে সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে জরিপে। বলা হয়েছে, বর্তমানে এসব শিল্পে ১ কোটি ২৬ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, যা ২০৩২ সালে ৩ কোটি ছাড়াবে।

বেজা জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে তা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। ভবিষ্যতে কোন এলাকায় কী ধরনের অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করতে হবে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য কী পরিমাণ জমির প্রয়োজন হবে তার একটি ধারণা পাওয়া যাবে মহাপরিকল্পনা থেকে।