জানতে চাইলে পাবনা বিসিক শিল্পনগরের কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, এখানে দিনে চার থেকে পাঁচবার লোডশেডিং হচ্ছে। এতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে। বারবার লোডশেডিংয়ের কারণে কাঁচামাল নষ্ট হচ্ছে এবং অতিরিক্ত শ্রমঘণ্টাও ব্যয় হয়। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর খরচ ৫ থেকে ১০ শতাংশ বেড়ে গেছে।
আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে আরও বলেন, উৎপাদন সচল রাখতে বিসিক শিল্পনগরকে লোডশেডিংমুক্ত রাখার অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপরও বিদ্যুৎ–বিভ্রাট কমেনি।
এদিকে গত রোববার সরেজমিন শিল্পনগর ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ থাকলে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠছে কারখানাগুলো। যেন কথা বলার সময় নেই কারও। লোডশেডিং হলেই আবার সব নিথর, নিস্তব্ধ। কর্মীরা কারখানা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন বাইরে, গল্পে-আড্ডায় সময় কাটান।
এ শিল্পনগরে অবস্থিত উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এ আর স্পেশালাইজড রাইস মিলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. আক্তারুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের কারখানায় সাধারণত দিনে ৮০০ মেট্রিক টন ধান মাড়াই করে ৫০০ মেট্রিক টনের মতো চাল উৎপাদন হয়। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে ধানমাড়াই কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখন প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ মেট্রিক টন ধান মাড়াই হচ্ছে, যা থেকে চাল উৎপাদন হয় ২৫০ থেকে ৩০০ মেট্রিক টন।
এ আর স্পেশালাইজড রাইস মিলের উৎপাদন ব্যবস্থাপক আমিরুল ইসলাম জানান, তাঁদের কারখানাটিতে অটোমেশিন রয়েছে। প্রতিবার লোডশেডিং হলে মেশিনের বিভিন্ন ইউনিটে কাঁচামাল আটকে যায়। আবার বিদ্যুৎ এলে মিল চালুর আগে জমে থাকা কাঁচামাল সরিয়ে চালু করতে হয়। এতে অতিরিক্ত এক ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে দিনে তিন–চারবার লোডশেডিং হলে চার ঘণ্টার মতো অতিরিক্ত ব্যয় হয়।
পাবনা শিল্পনগরের তুষার ফ্লাওয়ার মিলের মালিক আখতার হোসেন জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকলে তাঁর কারখানাটি দিনে ১৮ ঘণ্টা চালু রাখা হতো। এতে ১৮০ টন আটা উৎপাদন করা যেত। বর্তমানে লোডশেডিংয়ের কারণে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা মিল চলে। এতে আটা উৎপাদন কমে ১০০ থেকে ১১০ মেট্রিক টনে নেমে এসেছে।
পাবনা বিসিক শিল্পনগরের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখানকার প্রতিটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎনির্ভর। ফলে বিদ্যুৎ না থাকলে প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা বিদ্যুৎ বিভাগকে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি, ওনারা একটা
ব্যবস্থা নেবেন।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিপণন প্রতিষ্ঠান নেসকো লিমিটেড-২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের আওতায় ২২ থেকে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু বিসিক শিল্পনগরের চাহিদা ১২ মেগাওয়াট। তাই জাতীয় গ্রিড থেকে যখন যেভাবে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, তখন সেভাবে তা ভাগ করে সরবরাহ করা হয়।