জুয়েলারি মেলায় মিলছে ছাড় ও প্যাকেজ সুবিধা

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির আয়োজনে তিন দিনের অলংকার প্রদর্শনীর একটি স্টলে সোনার অলংকার দেখছেন দর্শনার্থীরা। আজ রাজধানীর আইসিসিবিতেছবি: খালেদ সরকার

এক ছাদের নিচে সারি সারি সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের স্টল। সেখানে সাজানো বিভিন্ন ধরনের সোনা ও ডায়মন্ডের অলংকার। পাশাপাশি রয়েছে সোনা যাচাই ও হলমার্ক করার যন্ত্র। ক্রেতারা বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখছেন; নকশা ও মূল্যছাড়ে বনিবনা হলে কিনছেনও কেউ কেউ।

রাজধানীর পূর্বাচলে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এমন দৃশ্য। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বা বাজুসের আয়োজনে সেখানে শুরু হয়েছে বাজুস ফেয়ার নামে তিন দিনের অলংকার প্রদর্শনী ও মেলা। তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত এ মেলার উদ্বোধন করেন চিত্রশিল্পী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুন নবী ও ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল।

বাজুস সভাপতি সায়েম সোবহানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য মির্জা আজম, বাজুসের পণ্যদূত মমতাজ বেগম, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নী, উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্সের (উই) সভাপতি নাসিমা আক্তার ও বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায় প্রমুখ।

এবারের মেলায় ৯টি প্যাভিলিয়ন, ১৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ১৫টি স্টলে মোট ৪১টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। মেলার প্রতিপাদ্য ‘সোনায় বিনিয়োগ, ভবিষ্যতের সঞ্চয়’। শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ মেলা চলবে।

আয়োজকেরা জানিয়েছেন, দেশীয় জুয়েলারিশিল্প সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে একটি অবস্থান তৈরি এবং দেশের স্বর্ণশিল্পীদের তৈরি আধুনিক নকশার অলংকারের পরিচিতি বাড়তে এ মেলা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

অলংকার প্রদর্শনীর একটি স্টলে সোনার অলংকার দেখছেন দর্শনার্থীরা। আজ রাজধানীর আইসিসিবিতে
ছবি: প্রথম আলো

মিলছে ছাড় ও প্যাকেজ সুবিধা

মেলায় সোনার তৈরি আংটি থেকে শুরু করে কানের দুল, চুড়ি, বালা, ব্রেসলেট, গলার চেইন, লকেট, চিকহার, সীতাহার, টিকলি—সবই পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি রয়েছে সোনার তৈরি চশমা, ঘড়ি,  মুকুটের মতো শোপিসও। সোনার পাশাপাশি ডায়মন্ড বা হীরার গয়নাও রয়েছে বেশ কিছু স্টলে। এসব পণ্যেই প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ অফার ও মূল্যছাড় দিচ্ছে।

ভেনাস জুয়েলার্স মেলা উপলক্ষে নকশাভেদে অলংকার তৈরির মজুরিতে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিধান মালাকার বলেন, ‘বর্তমানে বিয়ের অনুষ্ঠানে দেশীয় নকশার বেশ চাহিদা রয়েছে। আমরাও তাই দেশি কারিগরদের নকশা করা অলংকার বিক্রিতে বেশি জোর দিচ্ছি।’

মূল্যছাড়ের পাশাপাশি নানা ধরনের প্যাকেজ সুবিধাও দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। গৌরব জুয়েলার্স ১০ লাখ টাকার বেশি সোনার অলংকার কিনলেই দিচ্ছে থাইল্যান্ডে ৪ দিন ৩ রাতের কাপল ট্যুরের সুবিধা।  

অলংকার ছাড়াও জুয়েলারি খাতের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিয়ে মেলায় এসেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এর একটি রাজ ঐশ্বরী। প্রতিষ্ঠানটি স্বর্ণ পরীক্ষা, হলমার্ক করা, স্বর্ণ কাটা, চেইন তৈরির বিভিন্ন যন্ত্র প্রদর্শন করছে। এসব যন্ত্রের দাম ৫ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত। রাজ ঐশ্বরীর স্বত্বাধিকারী শিমু রানী দেব জানান, দেশে এখন স্বর্ণ পরীক্ষা ও হলমার্ক করা অলংকারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির চাহিদাও বেড়েছে।

মূল্যবৃদ্ধিতে বেচাকেনায় প্রভাব

দেশের বাজারে বর্তমানে ভালো মানের অর্থাৎ হলমার্ক করা ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিপ্রতি ১ লাখ ১০ হাজার ৬৯১ টাকা। গত বছরের জানুয়ারিতে এ দাম ছিল প্রায় ৮৮ হাজার টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ভরিপ্রতি দাম বেড়েছে ২২ হাজার টাকার বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায় বেচাকেনা কমে গেছে।
মেলায় অংশ নেওয়া কুঞ্জ জুয়েলার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমন চন্দ্র দে বলেন, মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতার সংখ্যা অনেক কমে গেছে।

অলংকার প্রদর্শনী প্রাঙ্গনের চিত্র। আজ রাজধানীর আইসিসিবিতে
ছবি: প্রথম আলো

ঐতিহ্য রক্ষায় জোর দেওয়ার তাগিদ

মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বক্তারা বলেন, গয়নার বাজারে এখনো গ্রাহকের প্রথম পছন্দ সোনা। এই ধাতুর মূল্য সংযোজন অন্য যেকোনো সম্পদের তুলনায় ৬-৭ গুণ বেশি। বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও সোনার ব্যবহার রয়েছে। এ কারণে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার চাহিদা বাড়ছে।

সেমিনারে চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও নকশার প্রতি সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। সারা দেশে জুয়েলারি শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক দক্ষ শিল্পী ও নকশাকার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। আমাদের নকশার বৈচিত্র্যও অনেক। ফলে জুয়েলারি খাতের জন্য একটি আলাদা ইনস্টিটিউট তৈরির মাধ্যমে সবাইকে একটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে আনা গেলে দেশের জুয়েলারিশিল্প সমৃদ্ধ হবে।’

ডিজাইনার বিবি রাসেল বলেন, দেশের প্রতিটি অঞ্চলে কারিগরদের আলাদা ও নিজস্ব নকশা রয়েছে। এগুলোকে সহজীকরণ করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায় বলেন, ‘তৈরি পোশাকসহ অনেক খাত রপ্তানিতে ভালো করছে। অথচ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা সোনা রপ্তানির সুযোগ তৈরি করতে পারছি না।’ তাই সোনা রপ্তানির সুযোগ তৈরিতে সরকারের কাছে সহযোগিতা চান তিনি।