বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান

বিজিএমইএ আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী মেড ইন বাংলাদেশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ নেতা ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী। গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে
ছবি: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনিয়োগ ও পণ্যের উৎসের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিতে বিদেশি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি। এর ফলে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন বিনিয়োগ ও সোর্সিংয়ে জন্য সর্বাধিক অনুকূল গন্তব্য হয়ে উঠেছে। দেশের বিনিয়োগবান্ধব নীতি এবং বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ উইক-২০২২’–এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান। তৈরি পোশাকশিল্পে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং বা ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরতে সাত দিনব্যাপী এই আয়োজনের আয়োজক তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এতে সহায়তা করছে বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ (বিএই)।

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এপিক গ্রুপের নির্বাহী চেয়ারম্যান রঞ্জন মাহতানি, স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শোভন ইসলাম, পানাম গ্রুপের এমডি অমল পোদ্দার, স্নোটেক্স গ্রুপের এমডি এস এম খালেদ ও ফোর্টিস গ্রুপের এমডি শাহদাৎ হোসেনের হাতে বিশেষ সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তৈরি পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি যাতে অব্যাহত থাকে, সে জন্য নগদ সহায়তাসহ অন্যান্য সুবিধা আমরা প্রদান করছি। বিনা শুল্কে কাঁচামাল আমদানির সুবিধা; ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খোলার সুবিধা; হ্রাসকৃত শুল্কে যন্ত্রপাতি আমদানি এবং রপ্তানিমুখী শিল্পের অনুকূলে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে অতি অল্প সুদে কাঁচামাল ক্রয়ের জন্য ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। যার ফলে গত অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাত থেকে অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়।

পোশাকের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কাপড়ের মান বৃদ্ধি এবং শ্রমবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, শুধু পণ্য রপ্তানি করলেই চলবে না, নিজের দেশের ভেতরেও বাজার সৃষ্টি করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির শুরুতে যখন উন্নত বিশ্বের অনেক দেশই বিপর্যস্ত, তখন আমাদের সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপ, আর্থিক প্রণোদনা ও নীতি সহায়তার কারণে করোনা মহামারি অত্যন্ত সফলভাবে মোকাবিলা করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও অর্থনৈতিকভাবে হিমশিম খাচ্ছে। নানা অসুবিধা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাই আমরা চাই, যুদ্ধ বন্ধ হোক।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। আরও বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের (আইএএইফ) সভাপতি সেম অলটান, বিজিএমইএ জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এস এম মান্নান। উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সহসভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যখন বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের জন্য তাদের সীমানা খুলে দিচ্ছে, সেই সময়ে আমাদের কাস্টমস ও বন্ডে বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে লিড টাইমের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া বর্তমানে আমরা নতুন পোশাক উদ্ভাবনে জোর দিচ্ছে। তার জন্য নিত্যনতুন উপকরণ আমদানি করতে হয়। কাস্টমস ও বন্ডের বাড়তি হয়রানির কারণে শিল্পের উদ্ভাবনী অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।’

রাজধানীর র‌্যাডিসন হোটেলে আজ সোমবার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের আয়োজনে ৩৭তম আইএএফ বিশ্ব ফ্যাশন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।