তুলাবিহীন পোশাকে ১৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ দরকার

২০৩২ সালে তুলাবিহীন তৈরি পোশাকের রপ্তানি ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

বৈশ্বিক তৈরি পোশাক রপ্তানির ৫৭ শতাংশ এখন তুলাবিহীন বা নন-কটনের। অথচ বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পোশাকের মাত্র ৩০ শতাংশ তুলাবিহীন, আর বাকি ৭০ শতাংশই তুলার তৈরি পোশাক। অন্যদিকে চীনের রপ্তানি করা মোট তৈরি পোশাকের ৬৬ শতাংশই তুলাবিহীন। বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিযোগী ভিয়েতনাম ও ভারতে এই হার যথাক্রমে ৬৫ ও ৪৪ শতাংশ।

২০২২ সালে বাংলাদেশ ১ হাজার ৫৬০ কোটি মার্কিন ডলারের তুলাবিহীন তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। সমন্বিত সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে ২০৩২ সালে দেশ থেকে তুলাবিহীন বা নন-কটন পোশাক রপ্তানি বেড়ে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। তবে এ জন্য তন্তু ও সুতা, কাপড় এবং তৈরি পোশাক উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় ধাপে ধাপে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে হবে।

গত তিন বছরে আমাদের রপ্তানিতে নন-কটন পোশাকের হিস্যা ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৯ শতাংশ হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের পোশাকশিল্পে নন-কটন পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ এসেছে। 
ফারুক হাসান, সভাপতি, বিজিএমইএ

তুলাবিহীন পোশাক রপ্তানিসংক্রান্ত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষে গবেষণাটি করেছে ভারতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়াইজির অ্যাডভাইজার। রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে গতকাল রোববার এক অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান। প্রতিবেদনটির বিস্তারিত তুলে ধরেন ওয়াইজির বিজনেস ডিরেক্টর বরুণ বৈদ।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন ২০২২ সালে ১১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের তুলাবিহীন তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। তার মধ্যে আউটারওয়্যার ৩৪, প্যান্ট ১৪ ও অন্তর্বাস ১৩ শতাংশ। ওই বছর বাংলাদেশ রপ্তানি করে ১ হাজার ৫৬০ কোটি ডলারের তুলাবিহীন তৈরি পোশাক। এর মধ্যে আউটারওয়্যার ৩৮, প্যান্ট ২৩, শার্ট ১৪ ও অন্তর্বাস ৯ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতের তুলাবিহীন পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৪০ কোটি ডলার।

প্রতিবেদনটিতে বৈশ্বিক বাজারে তুলাবিহীন তৈরি পোশাক রপ্তানির সম্ভাবনা, জটিলতা, করণীয়সহ একটি পথনকশার সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, তুলাবিহীন তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়াতে সরবরাহব্যবস্থায় বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। কারখানাগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দক্ষ কর্মী বাহিনী গড়ে তুলতে দেশে–বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর রপ্তানিতে সরাসরি প্রণোদনা বা ভর্তুকি দিতে পারবে না। তবে রপ্তানি সক্ষমতা বাড়াতে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে চীন, তাইওয়ান ও ভারতের অভিজ্ঞতা নেওয়া যেতে পারে। চীনে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনে মূলধনে ভর্তুকি দেওয়া হয়। বিদেশে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নিতে প্রণোদনা দেয় দেশটি। তাইওয়ান গবেষণা ও উন্নয়নে ১৫ শতাংশ প্রণোদন দেয়। ভারতে তুলাবিহীন পোশাক ও কাপড় উৎপাদনে উৎসাহ দিতে ১৩০ কোটি ডলারের বাজেট রয়েছে। ৯০০ কোটি ডলার ব্যয়ে সাতটি স্থানে শিল্প পার্কও স্থাপন করছে তারা।

নন-কটন পোশাক রপ্তানিতে বিনিয়োগ ও বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘গত তিন বছরে আমাদের রপ্তানিতে নন-কটন পোশাকের হিস্যা ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৯ শতাংশ হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের পোশাকশিল্পে নন-কটন পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ এসেছে। নন–কটন পোশাকে জোর দিলেও তুলার তৈরি পোশাক থেকে আমরা মোটেও দৃষ্টি সরাচ্ছি না। বরং তুলার পোশাকের ক্ষেত্রে আমরা নতুন সম্ভাবনা তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছি।’

বিজিএমইএর সভাপতি জানান, বাংলাদেশে এখন ১০০ ডলার বা তার চেয়ে বেশি মূল্যের তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানি হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে তৈরি পোশাকশিল্পে মূল্য সংযোজন ৭০ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

এদিকে নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে তৈরি পোশাকশিল্পে খরচ বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন ফারুক হাসান। তিনি বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের মতো যেকোনো পরিষেবার মূল্য বাড়লে শিল্পের ওপর চাপ বাড়ে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি পোশাক উৎপাদনের খরচ বাড়িয়ে দেবে।

ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়িয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সেই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হবে। বিদ্যুতের দাম আগের জায়গায় নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর পরিচালক আসিফ আশরাফ, স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম প্রমুখ।